মঙ্গলবার , ১৬ আগস্ট ২০১৬ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

দুদকের ১৬৯ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

Paris
আগস্ট ১৬, ২০১৬ ১:২১ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ৫৬ মামলার আরো ১৮ আসামিসহ তালিকাভুক্ত ১৬৯ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন সময়ে দুদক কার্যালয় থেকে তালিকাভুক্ত এসব আসামির নাম ও ঠিকানাসহ বিমানবন্দর পাসপোর্টের ইমিগ্রেশন শাখা, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যা ব) পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে সম্প্রতি দুদকের ঢাকা কার্যালয় থেকে উপপরিচালক মো. ইব্রাহিমের সই করা পৃথক পৃথক চিঠিতে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি মামলার ১৮ আসামির নামের তালিকা সরকারের ওই শাখাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) চিঠিপত্র বিভাগও নিশ্চিত করেছে।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নতুন তালিকাভুক্ত ১৮ আসামির মধ্যে ১৭ জনই ব্যবসায়ী। আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার আসামি মেসার্স ভয়েস এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ও পরিচালক সৈয়দ রাজিয়া বানু।

একই দিনে ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার আসামি মেসার্স ইউকে বাংলা ট্রেডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আহমেদ তাজ উদ্দিন, পরিচালক মো. মুস্তাকুর রহমান ও বেসিক ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ মোনায়েম খান।

২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার আসামি রিলায়েন্স শিপিং লাইনের প্রোপ্রাইটর আসিফ ইকবাল ও ইউনিক সার্ভে সার্ভিস ব্যুরোর সার্ভেয়ার ও ম্যানেজিং পার্টনার মো. সিরাজুল ইসলাম।

একই দিনে ৭৪ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার আসামি ইমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম, পরিচালক এএসএম মনিরুল ইসলাম, পরিচালক সুজন কুমার বসাক ও পরিচালক অমিতাভ ভৌমিক।

এ ছাড়া দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৭০ কোটি ৭০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার আসামি আর কে ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল কুদ্দুস, পরিচালক রানী বেগম, কামরুল হাসান, রাশেদুল হাসান ও সার্ভেয়ার মো. শফিকুল ইসলাম।

বেসিক ব্যাংক থেকে ৫২ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই দিন দায়ের করা মামলার আসামি মেসার্স টেলিওয়েজ ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আজিম ও  চেয়ারম্যান রিজিয়া বেগমকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে জানান, তদন্তের স্বার্থেই আসামিদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দুদকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুদকের এই প্রচেষ্টা যাতে ব্যর্থ না হয় সেজন্যই আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই তালিকা আরো বাড়বে। কারণ দুদক চেয়ারম্যানসহ কমিশন চায় তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে।

এর আগে দুর্নীতি মামলায় পলাতক ১৫১ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। দুদকের তালিকাভুক্ত এসব দুর্নীতিবাজের কেউ যেন দেশ থেকে পালাতে না পারে সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব শাখাকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তালিকাভুক্তদের কেউ দেশত্যাগের চেষ্টা করলেই তাকে আটক করা হবে। তবে এই তালিকা ইমিগ্রেশনে পৌঁছার অনেক আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অন্তত ১৫ থেকে ৩০ দুর্নীতিবাজ।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যক্তিদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজউক, তিতাস, ওয়াসাসহ সেবা খাতের কর্মকর্তারা রয়েছেন।  চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে চিঠি দিয়ে দুর্নীতিবাজদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য দুদক থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

দুদক, ইমিগ্রেশন ও এসবিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ এসব ব্যক্তির মধ্যে অধিকাংশই বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলা আসামি। এর মধ্যে অনেক আসামির বিরুদ্ধে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে দুদক।

নিষেধাজ্ঞা জারি করা ১৫১ আসামির মধ্যে বেসিক ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে দেশত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা হলেন- বেসিক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম, প্রাক্তন এমডি একেএম সাজেদুর রহমান, বরখাস্ত উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এসএম ওয়ালিউল্লাহ, বরখাস্ত উপব্যবস্থাপক (প্রাক্তন ক্রেডিট ইনচার্জ, গুলশান শাখা) এসএম জাহিদ হাসান।

বেসিক ব্যাংকের চট্টগ্রাম রিজিওনাল অফিসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম, গুলশান শাখার প্রাক্তন ব্যবস্থাপক (উপমহাব্যবস্থাপক) শিপার আহমেদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান ও প্রধান শাখার মহাব্যবস্থাপক ও ব্রাঞ্চ ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী।

বেসিক ব্যাংক শান্তিনগর শাখার প্রাক্তন শাখা প্রধান মোহাম্মদ আলী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কনক কুমার পুরকায়স্থ, শান্তিনগর শাখার প্রাক্তন অপারেশন ব্যবস্থাপক (বর্তমানে এসএভিপি, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ শাখা) সরোয়ার হোসেন, শান্তিনগর শাখার প্রাক্তন উপমহাব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন, প্রাক্তন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, প্রধান কার্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট ডিভিশনের উপমহাব্যবস্থাপক কোরবান আলী, মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক খান, দিলকুশা শাখার প্রাক্তন ব্যবস্থাপক পলাশ দাশগুপ্ত, কমার্শিয়াল ক্রেডিট ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম হাসান, গুলশান শাখার প্রাক্তন ব্যবস্থাপক ও ক্রেডিট ইনচার্জ মহিবুল হক।

 

বেসিক ব্যাংকের মামলার আসামিদের মধ্যে যেসব ব্যবসায়ী রয়েছেন তারা হলেন, ‘মেসার্স বি আলম শিপিং লাইনসের মালিক মোহাম্মদ বশিরুল আলম, আমিরা শিপিং এজেন্সির মালিক গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, মেসার্স বীথি এন্টারপ্রাইজের মালিক কামরান শহীদ, মেসার্স নীল সাগর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেসার্স পারুমা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের মালিক আহসান হাবিব লেনিন, মেসার্স আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাহবুবুল আলম, এসডি সার্ভে ফার্মের ম্যানেজিং পার্টনার ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, নিউ অটো ডিফাইনের মালিক আসমা খাতুন, মেসার্স সৈয়দ ট্রেডার্সের ম্যানেজিং পার্টনার সৈয়দ মাহবুবুল গনি, সৈয়দ ট্রেডার্সের পরিচালক সুলতান আহমেদ, এসডি সার্ভে ফার্মের চিফ সার্ভেয়ার ও পার্টনার মো. ফারুক, রূপসা সার্ভেয়ার্সের চিফ সার্ভেয়ার ও ম্যানেজিং পার্টনার শাহজাহান আলী, মেসার্স নাহার গার্ডেন প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি সাইফুল ইসলাম, মেসার্স নাহার গার্ডেন প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন, সিমেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হাসান, সিমেক্সের পরিচালক নুসরাত জাহান (ঝুমু), আইএইচএস ইন্সপেকশন সার্ভিস (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সার্ভেয়ার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, পিএসআর সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানির চিফ সার্ভেয়ার ও ম্যানেজিং পার্টনার জসিম উদ্দিন চৌধুরী, দেশ পরিদর্শন কোম্পানির মালিক শফিকুল ইসলাম শিমুল, বিডিএস অ্যাডজাস্টার্সের চিফ এক্সিকিউটিভ ইবনে মোফাজ্জল বকরী, পিলুসিড টেক্সটাইলের নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী এনামুল হক ও মফিজুল ইসলাম।

এ ছাড়া ইউসিবিএলের প্রাক্তন নয়জন কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংকের বর্তমান ও প্রাক্তন মিলিয়ে সাতজন কর্মকর্তা, রাজউক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, তিতাসসহ মোট ১৫১ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে মোট ২ হাজার ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬ মামলা দায়ের করে দুদক। যেখনে মোট ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ২৬ জন, ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের ৯২ জন এবং সার্ভে প্রতিষ্ঠানের ১০ জন রয়েছে। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন।

 

এ বিষয়ে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আসামি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির যথাযথ তথ্যের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন ইমিগ্রেশন পুলিশে তথ্য দিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন। এজন্য কমিশনকে পৃথকভাবে অবহিত করতে কিংবা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।’

 

সূত্র: রাইজিংবিডি

সর্বশেষ - জাতীয়