সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
সিরিয়ায় চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কবল থেকে পালাতে চেয়েছিলেন খাদিজা সুলতানা। অথচ তার আগেই গত মে মাসে রাশিয়ার বিমান হামলায় তার মৃত্যু হয়।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন স্কুল থেকে দুই বান্ধবী শামিমা বেগম ও আমিরা আবাছির সঙ্গে সিরিয়ায় পালিয়ে যায় খাদিজা। ধারণা করা হয়, ইন্টারনেটে আইএসের প্রচারণার খপ্পরে পড়ে তারা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকেছিল। ওই সময় খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর। আর শামিমা ও আমিরার বয়স ছিল ১৫ বছর।
তিনজনের মধ্যে খাদিজা ও শামিমা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তুর্কি সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে তারা জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়। প্রেস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই তিন কিশোরীই সিরিয়ায় জঙ্গিদের বিয়ে করেছে। এদের মধ্যে খাদিজা সুলতানার স্বামী ছিলেন সোমালি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক। গত বছর বিমান হামলায় তার মৃত্যু হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, তিন কিশোরীকে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে ব্যবহারের জন্য আইএস বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। তবে রাকায় যাওয়ার কিছুদিন পরেই আইএস সম্পর্কে ভুল ভাঙে খাদিজার।
এর পরই সে পালানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু অস্ট্রিয়া থেকে যাওয়া সামারা কেসিনোভিক নামে আরেক কিশোরী গত বছর রাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে আইএসের হাতে ধরা পড়ে সে। পরে তাকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আর এই কারণে ভয়ে আইএস ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আর চিন্তাই করেনি খাদিজা।
খাদিজার পারিবারিক আইনজীবী তাসনিম অকুঞ্জি বলেন, ‘আইএস যদি আপনাকে ধরতে পারে তাহলে ওরা পালানোর চেষ্টার জন্য আপনাকে নৃশংস শাস্তি দেবে। যেই সপ্তাহে খাদিজা পালানোর পরিকল্পনা করেছিল, ওই সময় এক অস্ট্রীয় কিশোরী ধরা পড়ে এবং তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা মনে হয় তখন খাদিজা সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে এবং ঝুঁকি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’
মৃত্যুর আগে খাদিজার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছিল তার বোন হালিমা খানমের। ওই সময় খাদিজা বলেছিল, ‘আমার ভালো লাগছে না, আমি ভয় পাচ্ছি। হয়তো তোমাদের সঙ্গে আর দেখা হবে না।’
হালিমা তাকে সাহস জুগিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি। ভয় পেয়ো না। আমাদের ওপর আস্থা রাখ।’
খাদিজা আরো বলেছিল, ‘এখন সীমান্ত বন্ধ, আমি কীভাবে এখান থেকে বের হব? আমি পিকেকে (কুর্দি বাহিনী) অঞ্চল দিয়ে বাইরে আসতে পারব না।’
হালিমা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি বেরিয়ে আসার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী?’ তার জবাব ছিল, ‘শূন্য… মা কোথায়? আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ এর পরই ফোনের লাইন কেটে যায়। মায়ের সঙ্গে আর কথা বলা হয়নি খাদিজার।
সূত্র: রাইজিংবিডি