মঙ্গলবার , ১১ জুন ২০২৪ | ১৩ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

এমপি আনার হত্যা: নেপথ্যে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা

Paris
জুন ১১, ২০২৪ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া আরও আওয়ামী লীগ নেতার নাম বেরিয়ে আসছে। তাদের নজরদারিতে রেখেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যেসব নেতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হত্যাকাণ্ডে খুনিচক্রকে সাহস দিয়েছিলেন। ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। সরকারের সবুজ সংকেত মিললেই সন্দেহের তালিকায় থাকা এসব আওয়ামী লীগ নেতা একে একে গোয়েন্দা পুলিশের জালে আটকাবেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

এরই মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকেও এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের অনেক অজানা তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনার খুনের মিশন বাস্তবায়ন করতে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন শুধু ঢাকা নয়, ঝিনাইদহতেও একাধিক বৈঠক করেন। এই বৈঠকে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, কাজী কামাল আহমেদ বাবুও উপস্থিত ছিলেন। আর আনার খুনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। কলকাতার ফ্ল্যাটে আনারকে খুনের পর এসব নেতাকে ফোন করেছিলেন এবং ছবি পাঠিয়েছিলেন শিমুল ভূঁইয়া।

কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার আগে সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের ছবি তোলেন খুনিচক্র। সে ছবি কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিল শিমুল ভূঁইয়া। ছবি পাওয়ার পর গ্যাস বাবু তখন শিমুল ভূঁইয়াকে ধন্যবাদ জানান। এরপর খুনের বিষয় নিয়ে গ্যাস বাবু শাহীনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন। খুনের তিন মাস আগে থেকেই গ্যাস বাবু, শিমুল ভূঁইয়া ও মাস্টারমাইন্ড শাহীন সশরীরের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপে পরিকল্পনা করে আসছিলেন। এই তিনজনের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের তথ্য পেয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তকারীরা। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতেও এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার ফ্ল্যাটে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের পর ঘাতকচক্র মনে করেছিল তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবে। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের হাতে চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া গ্রেপ্তারের পর তারা ভয় পেয়ে যায়। এরপরই গ্রেপ্তার এড়াতে আখতারুজ্জামান শাহীন নেপাল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। আর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু তার ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন ভেঙে খানখান করে ফেলেন। এরপর ঝিনাইদহ সদর থানায় মোবাইল ফোন হারানোর জিডি করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তার ৩টি মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড নিয়েছে।

সূত্র বলেছে, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা ও লাশ গুমের পর ১৫ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন শিমুল ভূঁইয়া। এই শিমুল ভূঁইয়াকে হত্যামিশন বাস্তবায়নের পুরস্কারস্বরূপ ২ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবুর। ২৩ মে এই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরো টাকা জোগাড় করতে না পারায় শিমুল ভূঁইয়াকে ২৬ মে টাকা দেবেন বলে গ্যাস বাবু জানান। কিন্তু এই টাকা পরিশোধের আগেই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান গ্যাস বাবু।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে আখতারুজ্জামান শাহীন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাদের কেউ এতে সাহস দেন। আবার কেউবা ভয়ে শাহীনকে এড়িয়ে যান। আবার কেউ সরাসরি খুনে যুক্ত না হয়ে পেছন থেকে ইন্ধন দেন। যাদের বেশিরভাগ আনার দ্বারা আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কলকাতায় আনারকে খুনের পর সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শিমুল ভূঁইয়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ শিমুল ভূঁইয়াকে বাহবা দেন। এই তালিকায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছেন। তাকেও নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। ওই নেতা আনার হত্যার বিচার দাবিতে যেসব কর্মসূচি হচ্ছে তাতে একদিনও অংশ নেননি। উল্টো আনারের আসনে এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য দলভারী করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে কালিগঞ্জের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘জনাব আনোয়ারুল আজিম আনার সাহেব আপনি যদি পা পিছলান এই বাংলার মাটিতে আপনি বোধহয় থাকতে পারবেন না।’ আনার অনুসারীরা তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

কলকাতায় উদ্ধার মাংস মানুষের

সঞ্জীবা আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া পচে যাওয়া মাংসের টুকরোগুলো মানুষের। প্রাথমিকভাবে ফরেনসিক পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য জানিয়েছেন। নতুন করে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে নিউটাউনের বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়। উদ্ধার হওয়া মাংস এবং হাড়, এমপি আনারের কিনা তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে।

মাংস কিমা করতে মেশিন

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম হোসেন জানিয়েছেন, তিনি পলাতক আখতারুজ্জামান শাহীনের অধীনে মাসিক ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। শাহীনের নির্দেশেই তিনি জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় এনেছিলেন। তাকে রাজারহাটে একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন।

এ ছাড়া খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র, পলিথিন, ট্রলি ব্যাগ সব কিছুই কিনে আনা হয়েছিল নিউ মার্কেট এলাকা থেকে। অন্য দুই অভিযুক্ত ফয়সাল ও মুস্তাফিজ রহমান মাংস কিমা করার মেশিন কিনে এনেছিলেন।

আনারকে হত্যা করার পর তার মাংস এবং হাড় আলাদা করা হয়। তারপর ছোট ছোট টুকরা এবং কিমা করা হয় ওই মেশিনে। ওই মেশিন এখন কোথায় তা জানেন শুধু ফয়সাল সাজি।

মাংসের টুকরা ও হাড় উদ্ধার হলেও এখনো খোঁজ নেই সংসদের মাথার খুলি, কিংবা ব্যবহার করা অস্ত্রের। সিয়াম জানিয়েছেন, তারা একটি গাড়ি ভাড়া করে কৃষ্ণমাটিতে গিয়ে ট্রলিব্যাগ থেকে হাড় এবং মাথার অংশ বের করে খালের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিলেন।

এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় অনেকেই গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্ত শেষ হোক। অনেকে গ্রেপ্তার হতে পারেন। আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গিয়েছি। মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই আমরা আপনাদের কাছে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারব।

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ঢাকার ডিবি। কলকাতা পুলিশের হাতে রিমান্ডে রয়েছে সিয়াম ও জিহাদ হাওলাদার। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও কাজী কামাল। এর মধ্যে প্রথম তিনজন অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক থাকা অন্য আসামিরা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজি ও মো. জামাল হোসেন।

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়