সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভালাদিমির পুতিন ‘মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য’ রাশিয়ায় আংশিক সেনা সমাবেশের ঘোষণা করেছেন। জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছেন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে এবং ইউক্রেনের রুশ-অধিকৃত অঞ্চলের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। গতকাল মঙ্গলবার এই অঞ্চলগুলি রাশিয়ায় যোগদানের বিষয়ে দ্রুত গণভোট আয়োজনের ঘোষণা করেছে।
মি. পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, এই সৈন্য সমাবেশে রিজার্ভ সৈন্যদের ডাকা হবে।
তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা তার দেশকে ধ্বংস করতে চায়, ঠিক যেমন ভাবে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করেছিল।
‘কোন ফাঁকা বুলি না’
রুশ নেতা একই সাথে অভিযোগ করেন পশ্চিমারা ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’-এ জড়িত হয়েছে।
মি. পুতিন বলেন যে তিনি কোন ফাঁকা বুলি দিছেন না, কিন্তু ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তার দেশ “সম্ভাব্য সব উপায়” ব্যবহার করবে।
বিবিসির রুশ বিভাগের সম্পাদক বলেছেন, মি. পুতিনের অবস্থানের এই পরিবর্তনটি আসলে তার একটি স্বীকারোক্তি যে ইউক্রেনে রাশিয়ার দিন ভাল যাচ্ছে না
প্রেসিডেন্ট পুতিনের পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগু বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য তিন লাখ রিজার্ভ সৈন্যকে তলব করা হবে।
তিনি বলেন, এই সংখ্যাটি রাশিয়ার মোট আড়াই কোটি রিজার্ভ সৈন্যদের মাত্র এক শতাংশ।
মি. শোইগু স্বীকার করেন যে গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে ইউক্রেনে প্রায় ছয় হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে, যদিও পশ্চিমা সূত্রগুলি এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে মনে করে।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, মস্কোর এই লড়াই শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো পশ্চিমা জোটের বিরুদ্ধে। আজ (বুধবার) থেকেই সৈন্য সমাবেশ শুরু হয়ে যাবে।
ভ্লাদিমির পুতিনের এই নির্দেশনার ফলে যারা কোন একসময় রুশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন বা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভবিষ্যতে যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর কাজে লাগবার জন্য, সেই সব রিজার্ভিস্টদের এখন যুদ্ধ করার জন্য ডেকে পাঠানো হবে।
তিনি জানিয়েছেন যে রাশিয়ার অনেক যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত আছে। রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্যও তিনি বাড়তি তহবিল বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ”আমাদের দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা যদি হুমকির মধ্যে পড়ে, রাশিয়া এবং এর জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা সবরকমের ব্যবস্থা নেবো। এটা কোন ফাঁকা বুলি নয়।”
”যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, তাদের জানা উচিত যে, পাল্টা বাতাস তাদের দিকেও যেতে পারে।”
তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে যে তারা চায় না রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি থাকুক।
ডনবাসে যারা লড়াই করছে, তাদের আইনি স্বীকৃতি দেয়ারও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।
সেখানে যে তথাকথিত গণভোটের আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে মি. পুতিন বলেন, আমরা তাদের সহায়তায় রয়েছি।
ইউক্রেনের যে এলাকাগুলো রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা এই সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়ায় যোগর দেয়া প্রশ্নে জরুরি গণভোট আয়োজনের ঘোষণা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা এরকম লজ্জাকর গণভোটের ফলাফল কখনোই মেনে নেবে না।
নেটো সামরিক জোট জানিয়েছে, এ ধরনের পরিকল্পনা যুদ্ধকে আরও উস্কে দেবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সূত্র: বিবিসি বাংলা