নীতিমালা বদলাচ্ছে, ই-কমার্সে শতভাগ এফডিআইর সুযোগ আসছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গেজেট প্রকাশের পর পরিবর্তন আসছে জাতীয় জিজিটাল কমার্স নীতিমালায়।

বিনিয়োগ নীতিমালার সঙ্গে সামাঞ্জস্য আনতেই অনলাইন সেবা ও কেনাকাটায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় রকমের এই পরিবর্তন হচ্ছে।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে মন্ত্রিসভায় পাস হয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮। আর চলতি বছরের শুরুতে এটি কার্যকরে গেজেট প্রকাশ হয়।

সেখানে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের বাধ্যবাধকতার শর্ত দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল ‘ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কোম্পানি ও অনুরূপ বিদেশি কোম্পানি ৫১:৪৯ ইক্যুইটি ভিত্তিক মালিকানা ব্যবস্থায় প্রযোজ্য হবে।

আর এবার সংশোধনীতে এই শর্তই তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে দেশে এ খাতে শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবে বিদেশিরা।

ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধনের কাজ শেষ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও পাঠানো হয়েছিল সরকারের অনুমোদনের জন্যে। তবে এটির আরও কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আবারও দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, নতুন করে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মতামত নিয়ে এখানে কিছু বিষয়াশয় মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, মূলত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এই নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথমবার সরকার বিদেশিদেরকে ৪৯ শতাংশের বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেটি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সরকারের বৃহত্তর নীতি পরিপন্থী হয়েছে। আর সে কারণেই এটি সংশোধন করা হচ্ছে।

এ দফায় আরও কিছু সংশোধন করে দ্রুত সেটি মন্ত্রীপরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে আবার পাঠানো হবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। তবে নীতিমালায় দেশীয় শিল্প ও উদ্যোক্তাদের সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে, উল্লেখ করেন সচিব।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সরকারের যে উদ্যোগ রয়েছে, বিনিয়োগে বিদেশিদের অংশ বাড়লেও এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বরং ই-বাণিজ্যের যে প্রসার ঘটবে সেখানে তারা যুক্ত হতে পারবেন।

ই-কমার্স সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নে সেন্টার অব এক্সিলেন্স, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ বা অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল গঠন, ভোক্তাদের জন্য কোড অব কন্ডাক্টসহ বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই পাস হয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮।

এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নীতিমালার প্রাথমিক বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ করাসহ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব রেখে নীতিমালাটি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তবে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওই শর্তের ওপর কোনো সংশোধনী ছিল না।

এ অবস্থায় দেশীয় উদ্যোক্তারা এটিকে স্বাগত জানালেও দারাজের মতো বিদেশি বিনিয়োগের ই-কমার্স কোম্পানি চ্যালেঞ্জে পড়ে।

বিষয়টি নিয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্টদের দেনদরবার ও দেশের বিনিয়োগ নীতির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলে। শেষে দেশের জাতীয় বিনিয়োগ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এটি সংশোধনের প্রস্তাব করে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।

এরপর ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার বিদেশি বিনিয়োগের এই নীতির সংশোধনে আপত্তি তোলে বিসিএস, বেসিস, ই-ক্যাব ও বাক্যসহ কয়েকটি সংগঠন।

সংগঠনগুলো ওই বছরের ১৯ আগস্ট এক সভা করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তির কথা জানায়।

এরপর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ডেইলি স্টার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘দেশিয় ই-কমার্স খাতের ভবিষ্যত রোডম্যাপ-সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে দেশীয় উদ্যোক্তারা জানান, বিদেশীদের শতভাগ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া যেতে পারে তবে শর্তহীনভাবে এ সুযোগ দেয়ার পক্ষে তারা নন। শর্তহীন শতভাগ বিদেশি মালিকানা অনুমোদন দেয়া হলে তাদের অস্থিত্ব বিপন্নের আশংকা রয়েছে ।

তখন তারা জানান , বিদেশি মালিকানাধীন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান বাজারে পণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে কমিয়ে  বাজার দখল করার উদ্যোগ নিয়েছে।

দেশীয় উদ্যোক্তারা এবার শর্ত দেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কোনো একক বিনিয়োগ হিসেবে আসতে পারবে না। ‘বিদেশে নিবন্ধিত হোল্ডিং ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’ হিসেবে আসতে হবে এবং বিদেশে নিবন্ধিত হোল্ডিং কোম্পানিতে কমপক্ষে ৫ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থাকতে হবে।

এছাড়া শর্তের মধ্যে আরও ছিল, ই-কমার্স কোম্পানির  প্রযুক্তি প্লাটফর্ম সম্পূর্ণ দেশিয় প্রযুক্তিবিদের মাধ্যমে তৈরি হতে হবে। সকল ধরণের ডেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হোস্টেড করতে হবে। শুধুমাত্র ‘মার্কেটপ্লেস’ মডেলে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ হতে পারবে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের নামে এবং বিদেশি ব্যবস্থপনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ সীমা কার্যকর থাকবে।

তবে নতুন করে সংশোধনীতে এসব শর্ত কতটুকু যুক্ত হয়েছে তা জানা যায়নি।