ভারতে দ্য হিন্দুসহ শীর্ষস্থানীয় ৩ পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ভারত সরকার দেশটির শীর্ষস্থানীয় তিনটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিরোধী দল ও সমালোকদের মতে, সরকারের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিক্রিয়াতেই ওই তিনটি গণমাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করা হয়েছে।

জানা যায়, টাইমস গ্রুপ, এবিপি গ্রুপ এবং দ্য হিন্দু এ তিনটি কোম্পানিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সরকারি বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করেছে মোদি সরকার।

টাইমস গ্রুপের টাইমস অব ইন্ডিয়া ইংরেজি ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত দৈনিক। এ ছাড়া দ্য ইকোনমিক টাইমস নামে আরেকটি জনপ্রিয় পত্রিকা রয়েছে তাদের।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় একটি গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ-যেটির মোট সার্কুলেশন ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি- জানায়, মোদি সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার এক মাস আগে থেকেই তাদের পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে না।

টাইমস গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বেনেট, কোলম্যান অ্যান্ড কোং এর একজন নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সম্ভবত আমাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। এ জন্য আমাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

টাইমস গ্রুপের ১৫ শতাংশ বিজ্ঞাপন সরকারি খাত থেকে আসত বলেও জানান তিনি।

দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবিপি গ্রুপের দুই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সংবাদপত্রে জাতীয় নিরাপত্তা ও বেকারত্ব নিয়ে কয়েকটি পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছিল। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পলিসি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ কারণে গত ছয় মাস যাবত আমাদের ১৫ শতাংশ সরকারি বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

এবিপি গ্রুপের ওই দুই কর্মকর্তা আরও বলেন, যদি সম্পাদকীয় লেখার ক্ষেত্রে আপনি সরকারের নির্ধারিত সীমারেখার বাইরে চলে যান এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কিছু লেখেন তাহলে আপনাকে শায়েস্তা করতে তারা একটি অস্ত্রই ব্যবহার করবে-তা হলো তারা আপনার জন্য নির্ধারিত সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেবে।

একইভাবে দ্য হিন্দুও কয়েক মাস ধরে সরকারি বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারিতে ভারত-ফ্রান্সের মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল পত্রিকাটি।

এমন খবর প্রকাশ করায় পত্রিকাটির ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপন বিষয়ক এজেন্সি ব্যুরো অব আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের মহাপরিচালকের সঙ্গে ইমেইল ও ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন রয়টার্সের সাংবাদিক। কিন্তু তিনি এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন নি।

এভাবে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়ায় বিরোধীদল কংগ্রেসসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি স্বাধীন সাংবাদিকতার বিষয়ে ব্যাপক হস্তক্ষেপ করছেন। গণমাধ্যমকর্মীরাও সংবেদনশীল সংবাদ প্রকাশে সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।