নিরাপদ যৌনমিলনের প্রতি আগ্রহ কি কমে যাচ্ছে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নিরাপদ যৌনমিলনের প্রতি আগ্রহ কি কমে যাচ্ছে? কনডমের ব্যবহার কমে যাবার ইঙ্গিত সাম্প্রতিক কিছু জরিপে পাবার পর বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।প্রথমে শোনা যাক হেইলি নামের একজনের কথা (আসল নাম নয়)। কলেজ ছুটির পর এক বিকেলে তার দেখা হয় এ্যারনের সাথে (এটিও আসল নাম নয়) – যাকে তিনি হাইস্কুলে পড়ার সময় অল্পস্বল্প চিনতেন।

বহুদিন পর দেখা, তার ওপর ছুটির আগের সন্ধ্যেবেলা তাই শুরু হয়ে গেল গল্প, সাথে পান। জানা গেল, এ্যারন মাঝখানে বেশ কয়েকবছর সেনাবাহিনীতে কাটিয়ে ফিরেছেন।রাত বাড়তে থাকলো, তাদের কথাবার্তাও একটু অন্যরকম হতে শুরু করলো। তারা একসাথে বাড়ি ফিরলেন।

“এ্যারন যেহেতু অচেনা কেউ ছিল না – তাই একটা অপরিণত অল্পবয়েসী মেয়ের মতোই আমি ভাবলাম, কনডম ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই” – বলছিলেন হেইলি। তাই হলো, এবং কয়েকদিনে মধ্যেই তিনি শরীরে ক্ল্যামাইডিয়া সংক্রমণের লক্ষণ দেখতে পেলেন।

তার নিজের ওপরই রাগ হতে থাকলো, যে কেন তিনি এ কাজ করলেন। তার রাগ আরো বেড়ে গেল, যখন তিনি আরেক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলেন যে এ্যারনের নিজেরও জানা ছিল – তিনি ছোঁয়াচে রোগ বহন করছেন। কিন্তু তার পরও সে অরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে একের পর এক মেয়েকে সংক্রমিত করে চলেছিল।

হেইলি নিজে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতেন, তা ছাড়াও তার মাথায় এটা ঘুরছিল যে ‘কনডম ব্যবহারের কথা না তুললে তার পুরুষ সঙ্গী খুশি হবেন’। কিন্তু যখন তিনি বুঝলেন যে – তার দেহে যে সংক্রমণ হয়েছে তা না সারলে তিনি সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারাতে পারেন – তখন তাকে নতুন করে ভাবতে হলো।ব্রিটেনের স্কুলে যৌনশিক্ষার ক্লাসে কনডম ব্যবহারের কথা শেখানো হয় – কিন্তু তার পরও হেইলির মতো অনেকেই নিরাপদ যৌনসম্পর্কের নিয়ম কানুন মেনে চলেন না।

ইউগভ এবং পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলা হচ্ছে – ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়েসের তরুণতরুণীদের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে তাদের অর্ধেকই স্বীকার করেছেন যে তারা কনডম ব্যবহার না করেই নতুন-পরিচিত সঙ্গীর সাথে যৌনমিলন করেছেন।

আরো দেখা গেছে, এ বয়সের প্রতি ১০ জন যৌন-সক্রিয় তরুণতরুণীদের মধ্যে অন্তত একজন কখনোই কনডম ব্যবহার করে নি। অথচ ২০০৩ সালের এক জরিপে এই বয়সসীমার পুরুষদের মধ্যে ৪৩ শতাংশেরও বেশী বলেছিলেন – পূর্ববর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে তারা প্রতিবারই যৌনসম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার করেছেন।

অথচ এক দশক পরের জরিপগুলোয় দেখা যাচ্ছে, এই সংখ্যা ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। একই ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ ও ২০১৭ সালে করা জরিপে দেখা গেছে হাইস্কুল ছাত্রদের মধ্যে কনডম ব্যবহারের পরিমাণ ৬২ শতাংশ থেকে কমে ৫৪ শতাংশে নেমে গেছে।যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় – যেমন গণোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়া – তা নিয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে প্রতি চার মিনিটে একজন তরুণ সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

সরকারি তথ্যে বলা হচ্ছে, এর মধ্যে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে। ব্রিটেনে সিফিলিস এবং ‘সুপার গণোরিয়া’ নামে একটি রোগও ছড়াচ্ছে – যা সাধারণ এন্টিবায়োটিক দিয়ে সারে না।এসব রোগ বিস্তার ঠেকাতে পারে কনডম, যা কোন কোন ওষুধের দোকানে তরুণরা বিনামূল্যেও পেতে পারে।কিন্তু তাহলে এর ব্যবহার কমছে কেন?

অনেকে বলছেন, অন্যান্য গর্ভনিরোধক ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এর একটা কারণ।ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা বলছে, ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন, এবং আইইউডির মতো দীর্ঘস্থায়ী জন্মনিরোধ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে।

নানা রকমের কনডম এখন বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু তবু জনপ্রিয়তা কমছে কেন? ‘নারীদের কনডম’ও চালু হয়েছে ১৯৯২ সাল থেকে কিন্তু তা কখনোই জনপ্রিয়তা পায় নি।অনেকের মতে, এইচআইভি-এইডসের ভয় অপেক্ষাকৃত কমে যাওয়াটা একটা কারণ হতে পারে। কারণ এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকানোর সাথে কনডমের নাম অনেক দিনে ধরেই জড়িয়ে গেছে।

স্যামুয়েল (আসল নাম নয়) – যার বয়স ২৭, তিনি বলছেন তারা বড়দের কাছে এইডসের কথা শুনেছেন যে এ রোগ হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।তবে এখন এইচআইভির কথা অনেক কম শোনা যায়, ‘প্রেপ’ নামে এমন ওষুধ বেরিয়েছে যাতে আগে থেকেই শরীরকে এইচআইভি থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়, এইচআইভি-প্রতিরোধী এন্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধও বেরিয়েছে ।

এসবের সাথে কনডম ব্যবহার কমে যাবার সম্পর্ক দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায় চালানো এক জরিপে – যাতে পুরুষ সমকামীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।এইচআইভি ছাড়া অন্য যৌন রোগগুলো অতটা ভীতি-উদ্রেককারী নয়, হয়তো এন্টিবায়োটিক দিয়েই সেগুলোর চিকিৎসা সম্ভব।

এমন অনেক যুগল আছেন যারা কনডম ব্যবহার পছন্দ করেন না, কনডমের কারণে তারা যথেষ্ট উত্তেজিত হতে পারেন না এমন সমস্যাও আছে, – যাকে বলে সি আর ই পি।এটা সব বয়েসের পুরুষের মধ্যেই দেখা যায়, বলছিলেন সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনথিয়া গ্রাহাম। তিনি বলছিলেন, অনেকেই অভিযোগ করেন এতে যৌন অনুভূতি কমে যায়।

কোন কোন নারী মনে করেন কনডম ব্যবহার করতে বললে তাকে পুরুষসঙ্গীকে হারাতে হবে।তা ছাড়া কনডম কিনতে যাওয়াটাও অনেকের জন্য একটা সমস্যা, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। তা ছাড়া রয়েছে, আরো কিছু শারীরিক অসুবিধা বা ছিঁড়ে যাবার সমস্যা।

অনেক যুগলই কনডম ব্যবহার নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন, এটাও একটা কারণ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কথা হলো, এ ক্ষেত্রে সম্পর্কের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ব্রিটেনে এখন যেভাবে যৌন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তাতে আগামীতে অনেক পরিবর্তন আসছে। ভবিষ্যতে তরুণদের হয়তো দেখা যাবে এ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গী অনেক পাল্টে গেছে।