রামেকে পড়ে আছেন শিক্ষক বাবা, খোঁজ নেন না উচ্চশিক্ষিত সন্তানরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন স্কুলশিক্ষক সানাউল হক। ষাটোর্ধ্ব বয়স তার। অসুস্থ অবস্থায় এখন পড়ে রয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। উচ্চশিক্ষিত তিন মেয়ে ও স্ত্রীর সংসারে তবুও জায়গা হলো না অসুস্থ এই স্কুলশিক্ষক মো. সানাউল হক সরকারের। উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা ও স্ত্রী মিলে কৌশলে তার সব জমি ও টাকা পয়সা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন। তারপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে স্কুলশিক্ষক সানাউল হককে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন- এমন অভিযোগ উঠেছে পরিবারের বিরুদ্ধে।

এবিষয়ে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কয়েক দফা চেষ্টা করেও সমাধানে আসতে পারেননি। অসুস্থ ওই শিক্ষকের তিন মেয়ে ও স্ত্রী ফোনেও কোনোদিন খবর নেইনি। পরে স্কুলশিক্ষক সানাউল হকের জায়গা হয় ছোটভাই মোস্তাফিজুর রহমানের বেডের নিচে। পরে গত শনিবার ওই শিক্ষককে অসুস্থ অবস্থায় মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি রামেকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঔষুধপত্র থেকে যাবতীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন ও ভাইয়ের দেখ ভাল করছেন ছোটভাই মোস্তাফিজুর।

তবে বড় মেয়ের স্বামী কল্লল স্ত্রী সারাবানকে না জানিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন বলে সিল্কসিটিনিউজকে জানান, মোস্তাফিজুর রহমান।

স্কুলশিক্ষক মো. সানাউল হক সরকারে পরিবারের সদস্যরা হলেন, নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার বীর গ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তিনি বীর গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রী পারুল। তিন মেয়ের মধ্যে বড় হলেন, সারাবান তহুরা (৩৫)। তিনি ধামুরহাট গার্লস স্কুলের লাইব্রেরিয়ান। অপর মেয়ে সেফাতি রাব্বানি (৩২)। চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসে তার বিয়ে হয় ঢাকায়। বড় মেয়ে সারাবান তহুরা সেফাতি রাব্বানির বিয়েতে ছেলে পক্ষের লোকজনকে বলে বাবা সানাউল হক মানসিক প্রতিবন্ধী (পাগল)। তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না।

আর ছোট মেয়ে জান্নাতিয়া আদন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তিনি রাজশাহীতেই থাকেন। মেয়ে সেফাত রাব্বানি ও জান্নাতিয়া আদন বলেন, তার বাবা কোথায় আছেন তিনি জানেন না। তবে চাচা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের জানানো হয়েছে। তার পরেও কেউ দেখতে আসেনি।

মোস্তাফিজুর রহমান সিল্কসিটিনিউজকে জানান, বড় ভাই সানাউল হক সরকারের চার একর জমি। বাবা সানাউলকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে ২০০৫-২০০৮ সালে বেশকিছু জমি লিখে নেন তিন মেয়ে ও স্ত্রী। এর পরে গত ২০১৫ সালে বাড়ির ভিটা টুকুও লিখে নেন তারা। এছাড়া সানাউলের নামে ব্যাংকে থাকা টাকাগুলোও নিয়েছে বড় মেয়ে। তারপর থেকে অত্যাচার শুরু হয় সানাউলের উপরে।

তিনি আরো বলেন, মাঝেমধ্যে সানাউলকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাড়িতে উঠতে দেয় না। গত এক মাস আগে হঠাৎ বেশি অসুস্থ হন তিনি। তখন বাড়ি থেকে বাইরে আসলে তাকে আর ঢুকতে দেয়নি। এরপরে তিনি পাঁচদিন বাইরে ছিলেন। তার পরে এলাকার মানুষ এসে সানাউলের স্ত্রীকে বুঝিয়ে বাড়িতে তুলে দেন।

গত বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ছোটভাই মোস্তাফিজুরের বাড়িতে এসে বলে ‘আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও’। এসময় মোস্তাফিজুর ডাক্তার ডাকতে গেলে শিক্ষক সানাউলকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এতে ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকিরুল ইসলাম বলেও দরজা খুলতে পারেনি। এসয়ম স্থানীয় প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। পরে ওসি চলে যান। পরে স্থানীয়ভাবে চাপ প্রয়োগ করেও বাড়িতে জায়গা দেয়নি অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মো. সানাউল হক সরকারকে ।

ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকিরুল ইসলাম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

স/শা