ফেসবুকে কিশোরীর মৃতদেহের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

হবিগঞ্জে এক কিশোরীর ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে অভিযুক্তের মা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফেসবুক ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করতে থাকেন, ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে এবং পুলিশ প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করছে না।

হবিগঞ্জ জেলার একটি হাওর থেকে ১১দিন আগে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।

কিশোরীর বাবা বলছেন, ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করার পর অভিযুক্ত যুবকের হুমকির কারণে তিনি তার মেয়েকে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার একটা হাওর থেকে কিশোরীর ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে গত ১৭ই মার্চ। এর সপ্তাহ দুয়েক আগে ৪ঠা মার্চ মেয়েটির বাবা সায়েদ আলী আদালতে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।

নিহত মেয়েটির বাবা সায়েদ আলী জানিয়েছেন, তাঁর দায়ের করা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত যুবকের মা তাদের ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। গ্রামে এই মেম্বারের প্রভাবের কারণে প্রথমে তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার দ্রুত বিচার চান।

সায়েদ আলীর মতো স্থানীয়ভাবে আরো অনেকে অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণের মামলার পর পুলিশ সেভাবে তৎপর ছিল না। একইসাথে মেয়েটির বাবা সায়েদ আলী ঠেলাগড়ি চালিয়ে সংসার চালান। সেখানে অভিযুক্ত যুবকের মা ইউনিয়নের মেম্বার হওয়ায় কিশোরীর পরিবারটি অসহায় অবস্থায় পড়েছিল।

ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়ার পর সেই ছবি সামাজিক নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়লে, তখন স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে।

 
ফেসবুক, বাংলাদেশ, ধর্ষণ, নারী, নিরাপত্তা

তবে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেছেন, ধর্ষণ মামলা সরাসরি পুলিশের কাছে হয়নি। আদালতে মামলা হয়েছিল। আদালত থেকে মামলা থানায় আসার পর থেকেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে এখনও ধরা সম্ভব না হলেও তার মা’সহ দু’জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি উল্লেখ করেছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “এই ছেলেটার মা ওখানকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কলম চাঁন বিবি। ছেলেটির নাম বাবুল মিয়া। তার স্ত্রী এবং সন্তানও আছে । এরইমধ্যে সে কিশোরীকে ধর্ষণ এবং হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ঘটনায় বাবুল মিয়ার মা এবং ইসমাইল নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর বাবুল মিয়াকে গ্রেফতারের জন্য ডিবিসহ পুলিশে সব ইউনিট কাজ করছে।”

কিশোরীর মৃতদেহ পাওয়ার পর হত্যা মামলা করা হয়েছে। এর আগে মার্চের শুরুতে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরীর বাবা যে মামলা করেন, তাতে অভিযোগে বলা হয়- গত ২১শে জানুয়ারি তার ১৬ বছরের মেয়ে বিউটি আক্তারকে প্রতিবেশী যুবক বাবুল মিয়া অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে।

মেয়েটির বাবা বলেন, “আমার অভিযোগ, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করছে। ধর্ষণের পর আমি ধর্ষণ মামলা করছি। মামলা করার পর আমায় হুমকি দিছে, আমারে কাইট্যা ফালাইবো, আমারে মাইরা ফালাইবো। এর পরে আমি আমার মেয়েরে আমার শ্বশুর বাড়িত পাঠায় দিছিলাম। আমার শ্বশুর বাড়িত থাইক্যা আইনা, হেয় আমার মেয়েরে হত্যা করছে। আমি এর বিচার চাই।”

শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমেও সমাধানের চেষ্টা করে সময়-ক্ষেপণ করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পারে।

মি: রহমান আরও বলেছেন, “এজাহারে উল্লেখ আছে, ভিকটিম বাবুলের সাথে ভালবাসা করে চলে যায় ২১শে জানুয়ারি। সে ১৮দিন ছিল তার সাথে। এরপর বাড়িতে চলে আসে। তখন সালিশ সহ বিভিন্নভাবে সমাধানের চেষ্টা হয়। কিন্তু ছেলেটা যখন বিয়ে করতে রাজি হয় না তখন ধর্ষণ মামলা করে। পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে, তখনই মেয়েটাকে হত্যা করে।”

ধর্ষণের অভিযোগের ব্যাপারে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে মেয়েটির মৃতদেহ পওয়ার পরদিনই ১৮ই মার্চ । কিন্তু এখনও সেই রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়নি।

এখন অবশ্য স্থানীয়ভাবেও ঘটনার প্রতিবাদ করা হচ্ছে। সেই ব্রাহ্মণহ্ডোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদিল হোসেন দাবি করেছেন, তারা অসহায় পরিবারটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারাও প্রধান অভিযুক্ত যুবককে খুঁজেছেন পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য।

অবশ্য বিষয়টি সামাজিক নেটওয়ার্কে আলোচিত হওয়ার পরই পুলিশ, গ্রামবাসীসহ সব পক্ষই তৎপর হয় বলে স্থানীয়দের অনেকে বলছেন।

এদিকে, অভিযুক্তের দিক থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।