বগুড়া ভিক্ষুকমুক্তকরণে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর একদিনের বেতন নেয়া হচ্ছে

বগুড়া জেলায় ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মূল বেতনের একদিনের টাকা নেয়া হচ্ছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি ছাড়াই একদিনের বেতন দিতে বাধ্য হওয়ায় অনেকের মাঝে বিরূপ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস করছেন না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীকে একদিনের দিতে বলেছেন। উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী ভাষণে তার নির্দেশনা অনুসারে টাকা নেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, বগুড়া জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুসারে সাত হাজার ২৯১ জন ভিক্ষুকের সন্ধান পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বগুড়া জেলাকে ভিক্ষুকমুক্তকরণে কর্মসূচি হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হানা ইসলাম গত ২৯ জানুয়ারি জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে একদিনের মূল বেতন নিতে ১২ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের লিখিত নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ চিঠি সব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়ে দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা মোতাবেক দেশকে ভিক্ষুকমুক্তকরণের লক্ষ্যে স্ব-স্ব উপজেলায় একটি করে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। ওই হিসাব নম্বরে তদীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর একদিনের বেসিক জমাদানের জন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে টাকা জমা নেয়া শুরু হয়েছে এবং চলতি মার্চে তা শেষ হওয়ার কথা। বিভিন্ন অফিস প্রধান চিঠি পাওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশটি মেনে একদিনের বেতন জমা দিতে অনুরোধ করেন। টাকা দিতে বাধ্য হলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা অন্য কারও কাছে প্রতিবাদ করার সাহস না পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ধুনট উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফোনে ও ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে এভাবে টাকা দেয়ার প্রতিবাদ জানান। তারা বিষয়টি লেখার মাধ্যমে সরকারকে জানাতে অনুরোধ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধুনটের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জানান, তারা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। এরপরও সরকার উন্নয়ন খাতে এভাবে জনগণের কাছে টাকা নিতে পারে না। সরকার টাকা চাইলে তা অবশ্যই প্রজ্ঞাপন জারি করত।

ধুনট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, তিনি ডিসি অফিসের চিঠি পেয়ে তা রাজস্ব খাত থেকে বেতন পাওয়া সব শিক্ষককে জানিয়ে দিয়েছেন।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বগুড়া জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ প্রকল্পে তাদের একদিনের বেতন দিচ্ছেন। সামান্য কিছু টাকার জন্য জনগণ কখনও ক্ষুব্ধ হতে পারে না।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার জানান, তার উপজেলায় টাকা জমা দেয়ার কার্যক্রম চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়ায় এ কার্যক্রম চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হবে।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হানা ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনি একদিনের বেতন জমা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছেন। উত্তোলন করা টাকার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও টাকা দিবেন। সব টাকা একত্র করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে বগুড়া জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হবে। তবে তিনি বগুড়া জেলায় কতজনের কাছে কত টাকা উত্তোলন করবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, গত উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীকে একদিনের বেতন দিতে বলেছেন। তার ওই ভাষণের আলোকে বগুড়ায় টাকা উত্তোলন চলছে।