আপন জুয়েলার্সের চোরাচালানের সোনা বেড়ে হয়েছে ১৫.১৩ মণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আপন জুয়েলার্সের সাময়িক জব্দ করা সোনার পরিমাণ আরও বেড়েছে। আগের ৪৯৭ কেজি বা সাড়ে ১৩ মণের সঙ্গে নতুন করে আরও যুক্ত হয়ে এবার সোনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬৭ দশমিক ৫৪ কেজি বা ১৫ দশমিক ১৩ মণ। এছাড়া রয়েছে ৪২৯ গ্রাম ডায়মন্ড। এসব সোনা ও ডাইমন্ডের বৈধতা নিয়ে মালিকপক্ষের দেওয়া ব্যাখ্যা যৌক্তিক না হওয়ায় চোরাচালান হিসেবেই দেখছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। রবিবার (৪ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সহকারি পরিচালক দিপা রানী হালদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপিতে জানানো হয়, সাময়িকভাবে আটক অলঙ্কারের কোনও যৌক্তিক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেনি। এতে প্রতিয়মান হয় এসব অলঙ্কার চোরাচালান করে মজুদ করা হয়েছিল।

আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শো-রুম থেকে ২৫৯ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার ৩১৫ টাকা মূল্যের মোট ১৪ দশমিক ৫০ মণ সোনার অলঙ্কার এবং আনুমানিক ১০ কোটি টাকা মূল্যের সাত হাজার ৩৬৯ পিস ডায়মন্ড অলঙ্কার আনুষ্ঠানিকভাবে কাস্টমস আইন অনুসারে ঢাকা কাস্টমস হাউজের গুদাম কর্মকর্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে রবিবার জমা দেওয়া হয়।

এরমধ্যে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের শো-রুমের ইনভেন্টরির সময় আগের অতিরিক্ত ২১ দশমিক ৮৩ কেজি ওজনের আরও সোনার অলঙ্কার পাওয়া যায়। এখানে তদন্ত টিম লকারের ভেতরে আরেকটি লকারের সন্ধান পায়। সেখান থেকে এই সোনা উদ্ধার করা হয়। রবিবার চূড়ান্তভাবে জব্দ করার সময় প্রতিটি শো-রুম থেকেই বাড়তি সোনার অলঙ্কার পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

এর আগে গত ১৪ ও ১৫ মে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে ৪৯৭ কেজি বা সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৯ গ্রাম ডায়মন্ড জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাময়িক আটক এসব অলঙ্কারের বিষয়ে তিন দফায় আপন জুয়েলার্সকে শুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য বলা হয়। তারা দুই দফায় শুনানিতে অংশ নেয়। সর্বশেষ গত ৩০ মে তারা ১২৫ কেজি স্বর্ণের বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন। যাতে তারা দাবি করেছেন, সোনাগুলো বিমান বন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন যাত্রীকে দিয়ে ব্যাগেজ রশিদে আনা হয়েছে। কিন্তু এসবের কাগজপত্র ছিলো সব ফটোকপি। তা পযালোচনা করে দেখা যায়, এসব যাত্রীর মাধ্যমে আনা সোনার অলঙ্কার আপন জুয়েলার্সে বিক্রির পক্ষে বেচাকেনার রশিদ নেই। এছাড়াও আপন জুয়েলার্সের মজুদের রেজিস্ট্রার বুকের সঙ্গে সোনা কেনার কোনও সংযোগ নেই। এসব কাগজপত্রে প্রমান হয়, তারা সোনার বৈধতা উপস্থাপনের জন্য যেসব কাগজ দিয়েছে তা অসংগ্ল। এসব কাগজপত্র থেকে ১৯ জন যাত্রীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা ছয় মাসে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৮ বারও বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রতি ভ্রমণে তারা দুইপিস করে সোনার বার কিনেছেন। কিন্তু কী কারণে তারা এতোবার বিদেশে ভ্রমণ করেছেন, তারা অন্য কোনও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কিনা, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনও যাত্রী বিদেশ যাওয়ার সময় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলারের অধিক বৈদেশিক মুদ্রা নেওয়ার সময় ঘোষণা দিতে হয়। কিন্তু ওইসব যাত্রীর এমন কোনও ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তাই বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করার প্রাথমিক তথ্য তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়। তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এতে আপন জুয়েলার্সের সম্পৃক্ততাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, আপন জুয়েলার্সকে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মিত ভ্যাট এবং ইনকাম ট্যাক্স বিবারণীতে সোনা মজুদের হিসাব দাখিল করতে হয়। তাতে সর্বশেষ যে হিসাব দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দার জব্দ করার সোনার কোনও মিল পাওয়া যায়নি। তাদের শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানান, বিধান অনুযায় ঢাকা কাস্টমস হাউজের গুদাম কর্মকর্তার মাধ্যমে সাময়িক জব্দ করা সব অলঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন