৬৭ দিনে দুবার, ছয় বছরে রাজশাহীতে তিনবার দুর্ঘটনার কবলে প্রশিক্ষণ বিমান

শাহিনুল আশিক:


৬৭ দিনের মাথায় রাজশাহীতে ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে প্রশিক্ষণ বিমান। এনিয়ে প্রায় ছয় বছরে তিনবার ‍দুর্ঘটনার কবলে পড়লো প্রশিক্ষণ প্লেন। এসব দুর্ঘটনায় এক নারী প্রশিক্ষণার্থীর মৃত্যু হন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) তানোরে, চলতি বছরের গত ৯ জানুয়ারি শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর ছাড়াও ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল একই বিমানবন্দরে আছড়ে পড়ে প্রশিক্ষণ বিমান। এই ঘটনায় প্রশিক্ষাণার্থী পাইলট তামান্না রহমান (২২) নিহত হন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে দুপুর দেড়টায় উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পরে বিমানের যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে রাজশাহী বিমান বন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন ক্যাপ্টেন। কিন্তু কিছুতেই বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন তিনি। অবশেষে ক্যাপ্টেন সিদ্ধান্ত নেন খোলা মাঠেই বিমান জরুরি অবতরণ করাবেন।


২০১৫ সালের ১ এপ্রিল বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পরে প্রশিক্ষাণার্থী পাইলট তামান্না রহমান (২২) নিহত হন।- ছবি প্রথম আলো

সে অনুযায়ী তানোরের বড় মাঠের মধ্যেই তারা অবতরণ করেন। তবে খেতের মধ্যে উচু-নিচু আইল থাকায় বিমানটি অবতরণের সময় উলটে যায়। এতে ক্যাপ্টেন মাহাফুজ সামান্য আঘাত পেয়েছেন। বিমানের ক্ষতি হয়েছে। বিমানটি পুলিশ পাহারায় আছে বলে জানিয়েছেন- তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন- ক্যাপ্টেন তাকে এই কথাগুলো বলেছেন।

দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা জয়নুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক জানান, ‘তারা আলুর খেতে কাজ করছিলেন। বিমানটি আকাশে কয়েক বার চক্কর দেয়। তার পরে হঠাৎ আলুর খেতে পড়ে যায়। গতি থাকায় কয়েক বার উল্টে যায় বিমানটি। তবে অক্ষত অবস্থায় বিমান থেকে দুজন বের হয়ে আসে।’


২০১৫ সালের ১ এপ্রিল শাহ মখদুম বিমানবন্দরে আছড়ে পড়ে প্রশিক্ষণ বিমান। -ইত্তেফাক

তানোর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ জহুরুল ইসলাম জানান, ‘দুর্ঘটনার খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ক্যাপ্টেনের সাথে কথা হয়। তারা আহত কিনা জানতে চাই। এসময় ক্যাপ্টেন জানান- তারা সুস্থ রয়েছেন। ক্যাপ্টেন বলেন- আপনারা পানির ব্যবস্থা রাখুন। আর বিমানটির কাছে কাউকে আসতে দেওয়া যাবে না। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

জানা গেছে- এসটু-এজিজি মডেলের এই বিমানটি বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটির সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে আলুখেতে পড়ে। আর গ্রামের মধ্যে দুর্ঘটনা-কবলিত বিমান দেখতে উৎসুক জনসাধারণ সেখানে ভিড় করেন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালায়। দুপুরে শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিমানটি আকাশে ওড়ে। তানোরে গিয়ে সেটি আলুখেতে আছড়ে পড়ে। ওই বিমানে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের রাজশাহীর প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন মাহফুজ আহম্মেদ ও প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট নাহিদ হাসান নয়ন ছিলেন। দুর্ঘটনায় পড়লেও তারা দু’জনই সুস্থ আছেন। তবে ঠিক কী কারণে এবং কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে সেসব বিষয়ে এখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ক্যাডেট নাহিদ হাসান নয়ন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, বিমানের ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ করে ইঞ্জিনের তেলের তাপমাত্রা বাড়ছিল। আর ওই মুহূর্তে তাদের বিশেষ কিছু করার ছিল না। তারা ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছিলেন না। এরপরও অবতরণের চেষ্টা করে নিরাপদে নামতে পেরেছেন। তবে এতে এয়ারক্রাফটের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইঞ্জিনে আগুন ধরেনি।


May be an image of aircraft and outdoors
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) তানোরে।- ছবি সিল্কসিটি

রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভিন বলেন, এ দুর্ঘটনার পর বিমানের প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী দুজনই অক্ষত রয়েছেন। এখন ঘটনাটি কেন এবং কীভাবে ঘটেছে তা সংশ্লিষ্ট ফ্লাইং ক্লাব নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে। তারাই পরে এই ব্যাপারে বক্তব্য দেবেন।

পরে বিমান দুর্ঘটনাস্থান পরিদর্শনে আসেন বিমান বন্দরের ম্যানেজার দিলারা পারভিন ও রাজশাহী জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগাড়ী সার্কেল) আব্দুল রাজ্জাক। তারা দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের জায়গা ঘুরে দেখেন এবং ক্যাপ্টেন মাহাফুজ ও প্রশিক্ষিণার্থী নাহিদ হাসানের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরেই ল্যান্ড করার সময় বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। রানওয়েতে বিমানটির একটি চাকা ভেঙে পড়ে। তবে কেউ হতাহত হননি। এছাড়া ২০১৫ সালেও এই সংস্থার একটি বিমান শাহ মখদুমে আছড়ে পড়ে। এতে এক নারী প্রশিক্ষণার্থী নিহত হন।

স/আ