৮৩ দিন পর নিঃশর্ত মুক্তি পেলেন শিবগঞ্জের নিরপরাধ রুবেল

অবশেষে ৮৩ দিন পর নিঃশর্ত মুক্তি পেলেন কারাগারে থাকা নিরপরাধ মো. রুবেল (২৩)। হাইকোর্টের নির্দেশ ও শিবগঞ্জ থানা পুলিশের আবেদনে বুধবার নির্দোষ রুবেলকে নিঃশর্ত মুক্তির আদেশ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবু কাহার।

গত ১০ মার্চ পুলিশ ভুলক্রমে প্রকৃত আসামি রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলের বদলে মো. রুবেলকে একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। সেই থেকে মো. রুবেল কারাবন্দী ছিলেন।

এর আগে বুধবার ‘শিবগঞ্জে পুলিশের অবহেলা: এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তর-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এ প্রকাশিত সংবাদ সূত্রের উল্লেখ করে বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা মো. রুবেলের বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্টের একক বেঞ্চে মো. রুবেলের গ্রেফতার ও বিনা অপরাধে কারাবন্দী থাকার বিষয়টি নিয়ে শুনানির আবেদন করেন আইনজীবী। হাইকোর্ট আবেদনটি মঞ্জুর করে শুনানি করেন।

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানবিক কারণে মো. রুবেলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন হাইকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম মামলার আসামি না হয়েও এবং বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা মো: রুবেলকে দ্রুত সময়ে নিঃশর্ত মুক্তির আদেশ দেন। আদেশটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যথাযথ মাধ্যমে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে নির্দোষ মো. রুবেলকে কারামুক্ত করতে শিবগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বুধবার মো. রুবেলকে ভুলক্রমে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে তাকে মুক্তি দিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে একটি আবেদন করেন।

থানার ওসি আতিকুল ইসলামকে বিষয়টি তদারকির জন্য আদালতে পাঠানো হয়। বিকালে এই বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারক আবু কাহার ভুলক্রমে গ্রেফতার হওয়া মো. রুবেলকে নিঃশর্ত মুক্তির আদেশ দেন।

একই সঙ্গে আলোচিত মামলাটির প্রকৃত আসামি পলাতক মো. রুবেল আলী ওরফে বাবুলের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। তবে তথ্য যাচাই না করে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো ও তাকে দুই মাস ২৩ দিন কারাবাসে বাধ্য করার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশসহ শিবগঞ্জ থানা পুলিশের সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানোর আদেশ দেন।

মামলার পরবর্তী নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। এদিকে আদালতের আদেশের কপি জেলা কারাগারে পৌঁছালে সন্ধ্যায় মো. রুবেল মুক্তি পান।

কারাগার থেকে মুক্তির পর মো. রুবেল বলেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। স্থগিত হওয়া ইউপির উপনির্বাচনে তিনি নৌকা প্রার্থীর হয়ে কাজ করছিলেন। পুলিশের একজন সোর্স কাম দালাল ওই নির্বাচনে নিজেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। ওই দালালের রোষানলে পড়ে পুলিশ তাকে ভুলক্রমে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের সময় তিনি পুলিশকে বারবার বলেছিলেন তিনি কোনো মামলার আসামি না। তার নামে কোনো ওয়ারেন্টও নাই। তবে পুলিশের ওই দালাল ফোন করে অভিযানকারী পুলিশদের তাকে গ্রেফতারে চাপাচাপি করেন। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কালুপুর এলাকা থেকে গাঁজা সেবনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬)। মামলা করে ওইদিনই পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠায়। ঘটনার কয়েকদিন পর আসামি রুবেল বাবুল জামিনে মুক্তি পান।

এরপর তিনবার আদালতে হাজিরা দিয়ে রুবেল বাবুল পলাতক হয়ে যান। মামলার চার্জশিটের পর রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

এদিকে রুবেল বাবুলের গ্রেফতারি পরোয়ানায় পুলিশ গত ১০ মার্চ জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এরপর থেকেই নির্দোষ মো. রুবেল কারাবন্দী ছিলেন। অনুসন্ধানকালে পুলিশ ভুল রুবেলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুঝতে পারেন। বুধবার যুগান্তরে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে হাইকোর্টের দৃষ্টিতে পড়ে।

হাইকোর্ট নির্দোষ মো. রুবেলকে মুক্তির নির্দেশ দেন। শিবগঞ্জ থানা পুলিশও নির্দোষ রুবেলকে কারামুক্ত করতে তৎপরতা শুরু করেন। বুধবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি শেষে নির্দোষ মো. রুবেলকে মুক্তির আদেশ দিয়ে প্রকৃত আসামি পলাতক মো. রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সূত্র: যুগান্তর