৭ দিনের তদন্তে কেবল গাড়ির রঙ জেনেছে পুলিশ

সাতদিন হয়ে গেলেও পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নাকে চাপা দেয়া মাইক্রোবাসের সন্ধান পায়নি পুলিশ। এমনকি মাইক্রোর নম্বর, মালিকের নাম কিংবা চালকের চেহারা কিছুই স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে এ বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ৭ আগস্ট ঢাকার সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে সাইক্লিং করার সময় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় অভিযাত্রী রেশমা নাহার রত্নার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রত্নাকে চাপা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় মাইক্রোবাসটি। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল না কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। এখন এই ঘটনার তদন্ত চলছে প্রত্যক্ষদর্শী ও আশপাশের এলাকার ফুটেজ দেখে।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাস্থলের কোনো ফুটেজ না পেয়ে লেক রোডের আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য ও অন্যান্য ক্যামেরা দেখে একটি কালো মাইক্রোবাসকে ঘাতক হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে।

কালো মাইক্রোবাসটি টয়োটা হাইএস ব্র্যান্ডের। পুরো গাড়িটি কালো হলেও এর বাম দিকের দরজাটি সাদা রঙয়ের। নম্বর প্লেটটি স্পষ্টভাবে না দেখা যাওয়ায় আপাতত এতটুকু তথ্য নিয়েই এগোতে হচ্ছে পুলিশকে।

পুলিশ জানায়, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি পথে জানানো হয়েছে গাড়িটি সম্পর্কে। সেসব সড়কের সিটিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করবে তারা। তবে তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি এখনো ঢাকায়ই আছে।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক হোসেন বলেন, ‘শেরেবাংলা থানার একাধিক টিম গাড়িটি উদ্ধারে কাজ করছে। ঢাকা থেকে বাইরের ছয়টি পয়েন্টের প্রতিটিতে খোঁজ নেয়া হয়েছে। তবে গাড়িটি পাওয়া যায়নি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

শেরেবাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে একটি গাড়িকে শনাক্ত করেছি। তবে কোনো ক্যামেরাতেই এর প্লেটের নম্বরটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়িটির নম্বর শনাক্ত করার জন্য বিআরটিএতে পাঠিয়েছি। পাশাপাশি সিআইডির ফরেনসিক টিমকেও দেয়া হয়েছে। তারাও সহযোগিতা করবে। তবে আমরা গাড়ি কিংবা চালক কাউকেই শনাক্ত করতে পারিনি। চেষ্টা চলছে।’

এদিকে ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও গাড়ির নম্বর শনাক্ত করতে না পারার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলছে রত্নার পরিবার।

ranta

রত্নার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী রত্নার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, ‘উনাদের সাথে যতবারই কথা বলি তারা আশ্বাস দেন, চেষ্টা করছেন বলে জানান। তবে তারা সাত দিনেও এখনো ঘটনাস্থলের দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি-এটা দুঃখজনক।’

রত্নার ভাই মাহবুব আলম বাবু বলেন, ‘যে সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও নিরাপদ সড়ক। এমন সড়কে কাউকে চাপা দিয়ে গেলে আশপাশের বাসাবাড়ি, দোকান ও শপিংমলের ক্যামেরায় ধরা পড়ার কথা। এমনকি একটু সময় নিয়ে তদন্ত করলে গাড়িটি কোন গ্যারেজ থেকে বের হয়ে কোথায় গেছে সবকিছুই দেখা সম্ভব। যা-ই হোক পুলিশ বলেছে, তারা চেষ্টা করছে। আমরাও আশাবাদী।’

রত্না পেশায় একজন শিক্ষক। ধানমণ্ডির আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। রেশমার রক্তে ছিল অভিযানের নেশা। পর্বতারোহণের পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়ে তিনি অংশ নিতেন। মিরপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন তিনি।

ইডেন কলেজে লেখাপড়া করা রেশমা ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেন। কেনিয়া পর্বতের লেনানা চূড়া জয়ের পর ২০১৯ সালের আগস্টে ভারতের লাদাখে ছয় হাজার ১৫৩ মিটার উচ্চতার স্টক কাঙরি পর্বত চূড়া এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ছয় হাজার ২৫০ মিটার উচ্চতার কাং ইয়াতসে-২ পর্বত চূড়ায় সামিট করেন।

সূত্রঃ জাগো নিউজ