৪৫ মিনিটে জানা যাবে করোনা পরীক্ষার ফল

দেশে জেনেক্সপার্ট (রিয়েল টাইম পিসিআর) মেশিনে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যেখানে পিসিআর মেশিনে একটি পরীক্ষা করতে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে এ পদ্ধতিতে মাত্র ৪৫ মিনিটে ফলাফল পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ২৪ জুন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউটে এ প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিগগিরই আরো কমপক্ষে ১০টি প্রতিষ্ঠানে জেনেক্সপার্ট মেশিনে পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এছাড়াও সারাদেশে ২৭০টি মেশিনে পরীক্ষা শুরুর চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশে জেনেক্সপার্ট মেশিনের নেটওয়ার্ক আছে যা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেকাংশে সম্প্রসারিত। প্রাথমিক পর্যায়ে এ টেস্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে।

শিগগিরই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি পুলিশ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজধানীতে আইসিডিডিআরবির তিনটি ইউনিট, ব্র্যাকের তিনটি ইউনিট এবং সিলেটে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে।

এ টেস্টগুলো দুর্গম অঞ্চলেও চালু করা সম্ভব, যা বিবেচনা করা হচ্ছে। সর্বোপরি এ টেস্ট দ্রুত কভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

জেনেক্সপার্ট মেশিনে নমুনা প্রক্রিয়াকরণ করতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় লাগে এবং ৪৫ মিনিটের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। পজিটিভ রোগীর ফলাফল ৩০ মিনিটেও পাওয়া সম্ভব। এ নতুন পদ্ধতিতে মাত্র এক ধাপে (ভিটিএম টিউব থেকে নমুনা সরাসরি কার্টিজে দেওয়া হয়) টেস্ট সম্পন্ন করা হয় এবং ফলাফল কম্পিউটার থেকে সরাসরি পাওয়া যায়।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এমবিডিসি) সূত্রে জানা যায়, গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশে জেলা-উপজেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলো স্থাপিত জেনেক্সপার্ট মেশিনগুলোতে ২৫ লাখের বেশি যক্ষ্মার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার ফলে নতুন করে ৩ লাখ রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

অত্যন্ত সহজেই একটি নির্দিষ্ট কাঠি ব্যবহার মানুষের লালা সংগ্রহ করে টেস্ট কিটে বা কার্টিজে স্থাপন করলেই হলো। এরপর কার্টিজটি মেশিনে দিলে ৪৫ মিনিটেই ফলাফল পাওয়া যাবে। এখানে কোনো ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। ফলে এ মেশিন ব্যবহারের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রোফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম শামছুজ্জামান বলেন, স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক পরীক্ষার জন্য জেনেক্সপার্টে (রিয়েল টাইম পিসিআর) মেশিনটি খুবই কার্যকর। জেনেক্সপার্ট মেশিন ব্যবহার করে করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমোদন ইতোমধ্যে এফডিএ দিয়েছে। এ পদ্ধতিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। এ টেস্ট ক্লিনিক্যাল মূল্যায়নে করোনা পজিটিভ ও নেগেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ সাফল্য পেয়েছে।

সারা দেশে প্রায় ২৭০টি মেশিন স্থাপন করা আছে এবং সেগুলো কাজ করছে। সেক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার যুক্তিযুক্ত মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সব ধরনের খরচ দিয়ে জেনেক্সপার্ট কিটের দাম পড়ে মাত্র ২৪ ডলার। অন্যদিকে পিসিআর ল্যাবের একটি কিটের দাম পড়ে প্রায় ৩০ ডলার, তার সঙ্গে রিএজেন্টসহ আরো আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম প্রয়োজন। তাই পিসিআরের চেয়ে এটি অনেক সাশ্রয়ী।