২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন, বরাদ্দ বাড়ল স্বাস্থ্য ও কৃষিতে

করোনার কারণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ভার্চুয়াল এনইসি (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) বৈঠক। গণভবন থেকে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

এ সময় অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবনেই ছিলেন। বাকি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবেরা ছিলেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে।

এ বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এই তুলনায় নতুন এডিপির আকার বাড়ছে ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বা ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর বাইরে ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে।

ফলে সব মিলিয়ে এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিহন খাত আর সর্বনিু গণসংযোগে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.নূরুল আমিন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতেই ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন-যতই ঝড়-ঝাণ্ডা আসুক, বাধা আসুক কাটিয়ে উঠতে পারব। এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রখতে পারব।

তিনি আরও বলেন,‘করোনা দুর্যোগের মধ্যে আরেক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়। এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছে। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। ব্রিফিং এ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাস্তবতার নিরিখে আমরা এসব প্রকল্প অনুমোদনের ব্যবস্থা করব। স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩ কেটি টাকা। তুলনামূলক বেড়েছে ২ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।

এছাড়া কৃষি খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। বড়েছে ১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।

তিনি জানান চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে ৯৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৯৭ হাজার৩০ কোটি টাকা। সুতরাং শতাংশে কমলেও টাকার অংকে খরচ বেড়েছে।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ৩ খাত: আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়া খাত গুলোর মধ্যে পরিবহন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাতে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ৩ মন্ত্রণালয়: এডিপিতে ভিত্তিক বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এডিপিতে যত প্রকল্প: আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৬৭৭টি। এর মধ্যে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প আছে ৮৯টি। এছাড়া বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৪৭টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্তে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৯৬টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপোর (পিপিপি) প্রকল্প্রয়েছে ৬১টি। সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্প ৩৮২টি। মেয়াদ উত্তীর্ন ৩৪৩টি প্রকল্পও রয়েছে।