১৬ মে’র পর যেকোনো দিন আত্মসমর্পণ করবেন হাজি সেলিম

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিচারিক আদালতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট হাজি সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়।

এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ২৫ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ রায়ের নথি হাতে পান হাজি সেলিম। নথি পাওয়ার পরপরই হাজি সেলিম ঈদের পর যেকোনো দিন আত্মসমর্পণ করবেন বলে সেসময় জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।

আগেই দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী হাজি সেলিমের আত্মসমর্পণের সময় কাছাকাছি আসার মধ্যেই হঠাৎ গণমাধ্যমে খবর আসে তিনি দণ্ড মাথায় নিয়ে ‘গোপনে দেশ ছেড়েছেন’। এনিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে দেশ ছাড়ার খবরে সৃষ্ট আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই হুট করে দেশে ফিরেছেন হাজি সেলিম। ফলে এ নিয়ে ফের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

১০ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে হাজি সেলিমের বিদেশ যাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখেও পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে মন্ত্রী দাবি করেছেন, আইন মেনেই হাজি সেলিম দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি আইন মেনে আবার দেশেও ফিরেছেন।

হাজি সেলিমের গোপনে বিদেশে যাওয়া এবং আবার দেশে ফেরা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে কবে আত্মসমর্পণ করছেন হাজি সেলিম?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (৫ মে) হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘১৬ মে’র পর যেকোনো দিন হাজি সেলিম হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আত্মসমর্পণ করবেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনও করবেন হাজি সেলিম।’

তবে উচ্চ আদালতে দণ্ড বহাল থাকায় হাজী সেলিমকে কারাগারে যেতে হবে। কারাগারে না গিয়ে তার জামিন পাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।

এ প্রসঙ্গে হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘কারাগার থেকে হাজী সেলিম এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। সেই সঙ্গে জামিন আবেদনও করবেন। যেহেতু হাজি সেলিম সংসদ সদস্য, আশা করছি আত্মসমর্পণের পর কারাগারে গেলেও তিনি জেল কোডের নিয়ম অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন।’

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়।

প্রায় পাঁচ বছর পড়ে থাকার পর ওই আপিলের শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে থাকা মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন। এরপর কয়েক দিবস শুনানি শেষে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

২০২১ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।

আদালত ওইদিন তার রায়ে বলেন, ‘বিচারিক আদালতে রায়ে দণ্ডিত হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ ধারা সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ করা হলো। আর এ আইনের ২৭ (১)-এ আপিলের অংশ খারিজ করা হলো।’

ওই রায়ে বিচারকের স্বাক্ষরের পর তা চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়। রায়ের নথি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময়ের আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে বিচারিক (নিম্ন) আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ