১৫০০ ছিনতাই, ৫০ নারীর শ্লীলতাহানি, সবই পুলিশ পরিচয়ে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক : 

রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. শাকিল আহম্মেদ রুবেল (২৮), মো. আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও মো. হাবিবুর রহমান। এর মধ্যে মূল অভিযুক্ত শাকিল।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, একটি ওয়্যারলেস সেট, দুটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। সে এ পর্যন্ত পুলিশ পরিচয়ে দেড় হাজার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের পাশাপাশি সে নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করত। রুবেলের মূল টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ‘ঢাবির শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে সে গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। সেই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করে। ’

রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি রুবেলের বাড়ি গাজীপুর। তবে আরো দুটি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেয়নি। সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করত। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাত। ’

তিনি বলেন, ‘রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে এক হাজার ৫০০টির অধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের পর ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে সে অশালীন আচরণ করত এ জন্য যে তারা যেন পরে লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে বা অভিযোগ না করে। ’

ছিনতাইয়ের জন্য নির্জন স্থান বেছে নিত রুবেল জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘মেয়েদের মোটরসাইকেল উঠিয়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের ছয়টি মামলা বিভিন্ন থানায় রয়েছে। তাকে এবং তার সহযোগীদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করব কেউ পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেলে কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেল করে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে। ’

ঢাবির একজন শিক্ষার্থী কিভাবে এত সহজে রুবেলের খপ্পরে পড়ে যান জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই ছাত্রী তাকে পুলিশ ভেবে নেয়। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করত তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। ’

ছিনতাই কি রুবেলের পেশা নাকি নেশা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এইটা রুবেলের পেশা ও নেশা দুটাই। সে পুলিশের ছদ্মবেশে এই কাজগুলো করে আসছিল। এইটা বুঝতে বুঝতে সে সারা দেশে এক হাজার ৫০০টির মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে একাধিকবার জেলে গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলাও রয়েছে। ’

তার চার সহযোগীর কী কাজ ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগিতা করত। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিতে আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগিতা করত। ’

রুবেল ওয়াকিটকি, পিস্তল ও ডিএমপির লোগো কিভাবে পেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

সূত্র : কালের কণ্ঠ