১২ হাজারে ছেলেকে বিক্রি করতে চাওয়া সেই মায়ের পাশে নারী এমপি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
স্বামী ছেড়ে গেছে দীর্ঘদিন। নিজেও আক্রান্ত মৃগী রোগে। থাকেন বাবার সংসারে। সেখানেও নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অভাবের তাড়নায় ছোট ছেলে রামকৃষ্ণকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা সোনালী চাকমা। সন্তানকে বিক্রির জন্য হাজির হন বাজারে। দাম হাঁকেন মাত্র ১২ হাজার টাকা।

গত বৃহস্পতিবার এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে খাগড়াছড়ি বাজারে। ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়, যা নজরে পড়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমার।গতকাল শুক্রবার ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজন চাকমাকে সঙ্গে নিয়ে সোনালী ও তার ছেলেকে দেখতে যান বাসন্তী চাকমা।

তিনি তাদের জন্য ৬ মাসের খোরাকির ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোসহ তার পড়াশোনার সব খরচ বহন করার আশ্বাস দেন।এর আগে কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমা বিক্রির হাত থেকে বাঁচান ওই শিশুকে। তার হস্তক্ষেপেই মায়ের সঙ্গে ঘরে ফেরে ৬ বছরের রামকৃষ্ণ চাকমা।

রামকৃষ্ণকে স্কুলে ভর্তি করানোসহ তার পড়াশোনার খরচ বহনের আশ্বাস দিয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা বলেন, ‘কেউ না খেয়ে থাকলে তা জনপ্রতিনিধিদের জন্য লজ্জার একটি বিষয়। প্রান্তিকতার জন্য অনেক জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারি না।

কিন্তু কারো অসহায় অবস্থার কথা জানতে পারলে আমি ও আমার সহকর্মীরা সহযোগিতার হাত বাড়াব।’বাসন্তী চাকমা আরও বলেন, ‘আমরা সোনালীর জন্য কাপড়, খাবার-দাবারসহ ৬ মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজনে তাকে আরও সহযোগিতা করব।’ পাশাপাশি সোনালীর ছেলে রামকৃষ্ণকে সরকারি শিশু সদনে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা।

উল্লেখ্য, সোনালী চাকমা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়ার পাকোজ্জ্যাছড়ি এলাকার কালাবো চাকমার মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর সন্তান নিয়ে পৈত্রিক ভিটায় গোয়াল ঘরের পাশে থাকেন। তার বড় দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা থাকেন। আর মেঝো ছেলে খাগড়াছড়ি সদরে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা মা ও ছোট ভাইয়ের খোঁজখবর নেন না।

স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি বাজারে সন্তানকে বিক্রি করতে আসেন সোনালী। সন্তানের দাম হাঁকেন তিনি মাত্র ১২ হাজার টাকা। বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা একজন তার ছেলেকে ৫ হাজার টাকায় কিনতেও চান। কিন্তু সোনালী রাজি হননি। একপর্যায়ে বিষয়টি কয়েকজনের নজরে এলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। পরে কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমার হস্তক্ষেপে মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।

স্বজনরা জানান, সোনালী মানসিক ভারসাম্যহীন। কখন কি বলে ঠিক থাকে না। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মো. ছাবের বলেন, মৃগী রোগীদের মানসিক সমস্যা হতে পারে। জেলা সদর হাসপাতালে এই রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়। সোনালী চাকমা চাইলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে সহায়তা করা হবে।

সূত্র : আমাদের সময়