হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান

একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে গেলেই আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে- এমনটাই জানিয়েছেন একদল গবেষক। রাত ১০টার আগে বা রাত ১১টার পরে ঘুমাতে যাওয়া আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে- একটি নতুন গবেষণা এ কথা বলছে।

বিজ্ঞানীরা ৮৮ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষার পর ডেটা বিশ্লেষণে এমন তথ্য পেয়েছেন। পরীক্ষা করা হয় এরা কখন ঘুমাতে গেছে। এর পর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে- সেরা সময়টি হলো রাত ১০টা থেকে রাত ১০টা ৫৯ মিনিট।

যারা রাত ১০টার আগে ঘুমাতে গিয়েছিল তাদের পরবর্তীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেড়েছে। আর যারা মধ্যরাতের পরে ঘুমাতে গিয়েছিল তাদের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা রাত ১১টা থেকে ১১টা ৫৯ এর মধ্যে ঘুমিয়েছিলেন তাদের ঝুঁকি ১২ শতাংশ বেশি ছিল।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড প্ল্যানস বলেছেন, শরীরে একটি ২৪ ঘণ্টা অভ্যন্তরীণ ঘড়ি রয়েছে। যাকে সার্কাডিয়ান রিদম বলা হয়। এটি শারীরিক এবং মানসিক কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যদিও আমরা আমাদের গবেষণা থেকে নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছাতে পারি না। তবুও ফলাফলগুলো পরামর্শ দেয় যে তাড়াতাড়ি বা দেরিতে ঘুমানোর সময় শরীরের ঘড়িতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যার ফলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় লোকেরা কতক্ষণ ঘুমায় এবং কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির মধ্যে যোগসূত্র হাইলাইট করেছে। তবে এটিই প্রথম গবেষণা যা মানুষের ঘুমানোর সময় পরীক্ষা করে।

৮৮ হাজার জনেরও বেশি লোক একটি বৃহত্তর গবেষণাপ্রকল্পের অংশ হিসাবে এক দশক আগে নিয়োগ পান। তারা কবজিতে একটি যন্ত্র পরতেন যা তাদের ঘুম পরিমাপ করত। গবেষণার লেখকরা পাঁচ বছর পর দেখেন- অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিন হাজার ১৭২ জন (মোট ৩.৬ শতাংশ) কোনো একটি ধরনের হৃদরোগ তৈরি করেছিলেন। যার মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণ এবং হার্ট ফেইলিওর অন্তর্ভুক্ত ছিল। বয়স, লিঙ্গ, ঘুমের সময়কাল, ধূমপানের অবস্থা, বডি মাস ইনডেক্স, ডায়াবেটিস, রক্তের মতো অন্যান্য পরিবর্তনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার পরেও গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে যারা ঘুমাতে গিয়েছিলেন তাদের হার্টের সমস্যা কম ছিল।

ডা. প্ল্যানস বলেন, আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত করে যে ঘুমাতে যাওয়ার সর্বোত্তম সময়টি শরীরের ২৪ ঘণ্টা চক্রের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয়। আর বিচ্যুতিগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় ছিল মধ্যরাতের পরে, সম্ভাব্য কারণ এটি সকালের আলো দেখার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।

সমস্ত তথ্য প্রমাণ করে- শোবার সময় এবং হৃদরোগের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। ঘুমানোর সময়ের হেরফের পরবর্তী জীবনে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা সৃষ্টি করে।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কার্ডিয়াক নার্স রেজিনা গিবলিন বলেন, এই বড় গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া বেশির ভাগ মানুষ তাদের হৃদয়কে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ রাখতে পারবেন। তবে হৃদয় ও সংবহনজনিত রোগের ঝুঁকির কারণ হিসাবে ঘুমের সময় এবং সময়কাল সম্পর্কে আরো গবেষণা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সাধারণ সুস্থতার পাশাপাশি আমাদের হৃদপিণ্ড এবং সংবহন স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে সাত থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ