হুন্ডির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাজশাহীতে আ.লীগে নেতার বাড়িতে গুলি

ফাইল ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গরুর হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালুর বাড়িতে গোলাগুলির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত একটি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ওয়াহিদ জামিল মুরাদ ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদ আলম সম্রাটকে আদালতে পাঠানো হয়। আগামী ১০ আগস্ট রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, হুন্ডির টাকা নিয়ে মূলত এই ঘটনা ঘটেছে। ওয়াহিদ জামিল মুরাদ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিভিন্ন জনের কাছে দাবি করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান কালু ও তার ছেলের নিকট থেকে হুন্ডির প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তার। এই টাকা নিয়ে মূলত দ্বেন্দ্বের জের ধরে গত শনিবার দিবাগত রাতে নগরর মুন্সিডাঙ্গা এলাকায় কালুর বাড়িতে গিয়ে গুলি করেন ওয়াহিদ জামিল ও তার সহকারী সজল আলী।

আতিকুর রহমান কালু দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহী সিটি বাইপাশ গরুর হাটটি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে লিজ নিয়ে পরিচালনা করে আসছেন।

অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃত ওয়াহিদ জামিল মুরাদ রাজশাহীর পবা উপজেলার পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা হলেও তিনি মূলত থাকেন ঢাকার মীরপুরে এবং রাজশাহীর উপশহরে। এই মুরাদও একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী। তিনি আমেরিকান নাগরিকও। ২০ বছর ধরে তিনি আমেরিকাতেও বসবাস করছেন। এছাড়াও মীরপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার ও বিকাশ কুমার ও জোসেফের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র। ওয়াহিদ জামিলের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামেও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

আরকেটি সূত্র দাবি করেছে, শনিবার রাতে ওয়াহিদ জামিল তাঁর সহকারীকে নিয়ে যখন কালুর বাড়িতে যান তখন তাঁর গাড়িতে আরও একজন ছিলেন। তিনি পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পরে সটকে পড়েন। ওই ব্যক্তি ভারতীয় নাগরীক বলেও দাবি করেছেন সূত্রটি।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ওয়াহিদ জামিলের বিরুদ্ধে কড়া কোনো পদক্ষেপ না নিতে একটি শক্তিশালী গ্রুপ ব্যাপক তদবিরে নামে। গতকাল সোমবারও তাদের রিমান্ড বাতিল করতে তদবির চালায় ওই চক্রটি।

তবে আতিকুর রহমান কালু দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে ওয়াহিদ জামিলের কোনো পরিচয় নাই। তাঁকে তিনি চেনেনও না। এমনকি তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে (তুষার হাটের ব্যবসায়ী, আশিকুর রহমান টাইলস ব্যবসায়ী) কোনো সম্পৃক্ততা নাই।

গতকাল আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘ওয়াহিদ জামিল অনেক বড় মানুষ। তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। তাঁর সঙ্গে ১৫ কোটি টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়। এটি হওয়ার কোনো সুযোগও নাই। আমরা কেউ তাঁকে চিনি না।’

এদিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান কালুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ ঘটনার পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে দুটি শর্টগান, একটি পিস্তল ও ৩১ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

এ ঘটনার পরে আতিকুর রহমান কালুর ছেলে রেজওয়ানুর রহমান তুষার বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানাও একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়।

হুন্ডির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের এই ঘটনা কিনা জানতে চাইলে ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দুই পক্ষই মুখ খুলছে না। তবে ভিতরে বড় কোনো ঘটনা তো অবশ্যই আছে। আমরা সেটি বের করার চেষ্টা করছি। গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তদন্তে আসল ঘটনার বের হবে আশা করি।
স/আর