হুতি বিদ্রোহীদের হাতে ৫ বাংলাদেশি নাবিক বন্দী

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হাতে প্রায় ১০ মাস ধরে বন্দী বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাবিক। তাঁদের সঙ্গে আছেন ভারত ও মিসরের কয়েকজন নাবিকও। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ওমান থেকে সৌদি আরব যাওয়ার পথে ৩টি জাহাজের ২০ জন নাবিক ইয়েমেনের উপকূলে থামলে হুতি বিদ্রোহীরা তাঁদের বন্দী করেন।

কেরালা থেকে প্রকাশিত ভারতের নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ রোববার এ খবর জানায়। তবে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এই প্রতিবেদককে জানান, ইয়েমেনে বাংলাদেশের নাবিক আটকে পড়ার বিষয়ে তাঁদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই।

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, হুতি বিদ্রোহীদের হাতে আটক ২০ জন নাবিকের মধ্যে ১৩ জন ভারতের। আর বাকি সাতজন বাংলাদেশ ও মিসরের নাগরিক।

অসমর্থিত কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ওই সাত নাবিকের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশের নাগরিক।

বন্দী নাবিকদের মধ্যে একজন হলেন ভারতের কেরালার বাসিন্দা প্রবিন থাম্মাকারানতাবিদা (৪৫)। তিনিই হোয়াটসঅ্যাপে নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, নির্মাণকাজের জন্য তাঁরা ওমান থেকে সৌদি আরবে যাচ্ছিলেন। যাত্রাপথে তাঁরা লোহিত সাগরে একটি জাহাজডুবির খবর পান। ডুবে যাওয়া জাহাজের নাবিকদের উদ্ধারের পর তিনটি জাহাজ ইয়েমেনের উপকূলে নোঙর করে। পরে ইয়েমেন কোস্টগার্ড সদস্যের পরিচয় দিয়ে একদল লোক ২০ নাবিককে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় নিয়ে যায়। পরে কোস্টগার্ডের পরিচয় দেওয়া লোকজন জানান, তাঁরা হুতি বিদ্রোহী। ইয়েমেনের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশের অপরাধে ২০ নাবিককে আটকের কথা জানায় তাঁরা।

বন্দী নাবিকদের বরাতে নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারত, বাংলাদেশ ও মিসরের আটক ২০ নাবিককে হুতি বিদ্রোহীরা একটি হোটেলে আটকে রেখেছেন। ভেতরে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে লোক এসে তাঁদের খাবার দিয়ে যান।

শুরুতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন হুতি বিদ্রোহীরা। নাবিকেরা অভিযোগ করেছেন, ওমানের তিন জাহাজের মালিকেরা এখন পর্যন্ত নাবিকদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন না। হুতি বিদ্রোহীরা মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ ওমানি রিয়াল দাবি করেছেন। মুক্তিপণের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মালিকেরা।

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা মাস চারেক আগে বন্দী নাবিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতীয় কূটনীতিকেরা সবাইকে মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। ভারতের কূটনীতিকেরা হুতি বিদ্রোহীদের হাতে বন্দী ২০ নাবিককে সরকারনিয়ন্ত্রিত কোনো জায়গায় নেওয়া যায় কি না, সেই চেষ্টা করছেন।

এদিকে ওমানের জাহাজমালিকেরা গত ফেব্রুয়ারি থেকে নাবিকদের কোনো বেতন দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বন্দীরা।

উল্লেখ্য, ইয়েমেনে এখন গৃহযুদ্ধ চলছে। হুতি বিদ্রোহীরা ২০১৪ সালে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হুতি বাহিনী। মনসুর হাদির পক্ষে হুতিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে অভিযান চালাচ্ছে সৌদি আরব। সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও। অন্যদিকে ইরান হুতি বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে। যদিও তেহরান সরাসরি বিষয়টি স্বীকার করে না।

সূত্র:প্রথম আলো