হুকুমদাতা প্রো-ভিসির সচিব : রাবির সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার ঘটনায় গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাতের আঁধারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে বালু তুলে নিয়ে পুকুর ভরাটের ঘটনায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (০৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম বাদি হয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলাটি  দায়ের করেন। তবে মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মইনুল বাশার। এর সঙ্গে জড়িত বাকিদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ওই ভাঙ্গা দিয়ে ট্রাক বহনের অনুমতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সচিব প্রদ্বীপ কুমার। উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই উপ-উপাচার্য’র সচিব এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ধারণা করছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থানের পাশে সীমানা প্রাচীর ভেঙে ট্রাকে করে বালু নিয়ে অন্য কারও পুকুর ভরাট করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। তারা সীমানা প্রাচীর ভেঙে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং অনাধিকার প্রবেশ করে দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করেছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, ওই এলাকার আব্দুস সামাদ নামে এক ব্যক্তির পুকুর ভরাটের জন্য রাবির সীমানা প্রাচীর ভেঙে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। জামালপুর বস্তি সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানে ওই সময় দায়িত্বে ছিলেন প্রহরী হারেস। তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করলে রাতেই উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।

হারেজ নামে ওই এলাকায় দায়িত্বরত বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী গণমাধ্যমকে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সচিব প্রদ্বীপ কুমার ও কৃষি প্রকল্পের সেকশন অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসাইন সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার বিষয়টি অবগত। তাদের নির্দেশেই সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ওই ভাঙ্গা দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছিলো বহিরাগতরা।

এ বিষয়ে জানতে সাজ্জাদ হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে রাগান্বিত স্বরে কথা বলেন। তিনি জড়িত নন বরং উপর মহলের নির্দেশে এটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সচিব প্রদ্বীপ কুমার বলেন, ‘মাটি কিংবা গরু-ছাগল নিয়ে যাওযার জন্য ওই জায়গার আগাগোড়াই ভাঙ্গা ছিল। বছরের পর বছর ভাঙ্গা মেরামত করি, আবার এলাকাবাসী ভেঙ্গে দেয়। এভাবেই চলছিল। এরই মধ্যে গত শুক্রবার ওই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি এসে বলেন যে, দুই ট্রাক মাটি ওই ভাঙ্গা দিয়ে নিয়ে বহন করে কৃষি প্রকল্পের জমিতে রাখবে। পরে ঢাকিতে করে তা তাদের নিদিষ্ট স্থানে অপসারণ করবে। তারপর যেটি জানতে পারি ওই ভাঙ্গা দিয়ে মাটির পরিমাণ বেশি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ভাঙ্গা দিয়ে মাটি বহন করা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই ট্রাক মাটি নিয়ে যাবে এই ভেবে এলাকাবাসীর স্বার্থের কথা ভেবে আমি অনুমতি দিই। তবে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো আরেকটি বেশি ভেঙ্গে গিয়েছিল। তবে কাল (রবিবার) দুপুরের মধ্যেই এলাকাবাসী ভাঙ্গা প্রাচীর নিজ খরচে ভালো করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভেবেছিলাম অনুমতি না দিলে এলাকাবাসী ঝামেলা করতে পারে। আমাদের ওই এলাকাতে ৫-৬ শত আম গাছ রয়েছে। অনুমতি না দিলে তারা একদিনেই আমগাছগুলো কেটেও ফেলতে পারে। এর আগে সামান্য বাগান লিজ না দেয়ার কারণে গোটা বাগান পুড়িয়ে দিয়েছিলো।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি অভিযোগ করে বলেন, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সচিব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা ব্যবহার করার অনুমতি একজন উপ-উপাচার্যের সচিব দিতে পারেন না। এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি তথা উপাচার্যকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মনে করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘ওই এলাকার দায়িত্বরত প্রহরীর মাধ্যমে আমরা খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেই। কুচক্রী মহল সীমানা প্রাচীর ভেঙে এ ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় রাবির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এএইচ/এস