হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে: আরএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন- রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী পুলিশ লাইন্স্ এ আয়োজিত এক পরামর্শক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরএমপি কমিশনার এই মন্তব্য করেন।

রাজশাহী পুলিশ লাইনস কনফারেন্স রুমে ‘আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের পাথেয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী নিয়ে দেশে কর্মরত বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ‘বন্ধু’ ইউএসএইডের সহযোগিতার এই সভার আয়োজন করে।

পরামর্শক সভায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাদের দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারেই অংশ। তারা ‘হিজড়া’ এজন্য তারা কোনো অংশেই নিজেরা দায়ী নন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই তারা এমন ভিন্ন অবয়ব পেয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যাকে খুশি নারী করেছেন, যাকে খুশি পুরুষ করেছেন। আবার যাকে খুশি নারী ও পুরুষ উভয়েরই গুণ বিশিষ্ট করেছেন। যাদেরকে আমরা ‘হিজড়া’ বলে ডাকি। কিন্তু হিজড়া হওয়ার জন্য আমরা তাকেই দায়ী করছি। আর লোকলজ্জার ভয়ে পরিবার চ্যুত করছি। সমাজ থেকে বেড় করে দিচ্ছি। যা মোটেই কাম্য হতে পারে না।

একজন হিজড়া, তারাও একজন মানুষ। তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে। দেশের নাগরিক হিসেবে তারও মৌলিক চাহিদা ও অধিকার আছে। কিন্তু সবকিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তারা বেঁচে থাকার জন্য একজন গুরুর অধীনে যাচ্ছে। সেখানে তাদের গুরুদের চাঁদা তুলে এনে দিতে হয়। না দিলে সেখানেও তাদেরকে করুণ নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

এজন্য তারা চাঁদাবাজিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। যার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষ তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তবে তাদেরকে চাঁদাবাজির এই আদিপেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর আমাদেরকেও তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে হবে। তাদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা পরিবারে থেকে বের করে দেওয়ার কারণেই তারা আজ উচ্ছৃঙ্খল। তাই আসুন আমারা তাদের মেনে নেই। পরিবারচ্যুত না করে তাদের পরিবারেই ঠাঁই দেই। তবে তারা আর চাঁদার জন্য আপনাদের কাছে গিয়ে গন্ডগোল করবে না। কাউকে হয়রানিও করবে না।

সভায় পুলিশ কমিশনার দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এই জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সবার অংশগ্রহণে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও বিশেষ আহবান জানান।

পরামর্শক সভায় সভাপতিত্ব করেন- রাজশাহী মেট্রোপলিটন পলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস। মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন- বন্ধুর পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান।

আইনগত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন- বন্ধুর লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি সহকারী ব্যবস্থাপক তানভীর ইসলাম। অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন- ইউএসএইড এর অফিস অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রেডল বি অলসন। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- বন্ধুর ফেলো বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা মঈন, কোষাধ্যক্ষ জুলি খাতুন ও বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা সরকার বিজলী।