শনিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

হাসান নাসরুল্লাহ: আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লেবাননের সিংহমানব

Paris
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪ ৯:২৪ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার লেবাননের এই সিংহমানব ১৯৯২ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। যিনি শুক্রবার রাতে রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী শনিবার এক ঘোষণায় জানায় যে, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর হরত হ্রেইক-এ বৃহৎ আকারের বিমান হামলার মাধ্যমে নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই অঞ্চলে এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের মাধ্যমে ‘তীব্র ও অভূতপূর্ব’ হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, হামলাটি হিজবুল্লাহর মূল সদর দপ্তরে চালানো হয়। তার দাবি অনুযায়ী যেটি বেসামরিক ভবনের নিচে তৈরি করা হয়েছে।

নাসরুল্লাহর নেতৃত্ব

হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে নাসরুল্লাহ ইসরাইলের অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচিত হতেন। ইসরাইল বহুবার তার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। তবে সেসব হামলা ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র নাসরুল্লাহকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং তার অবস্থান জানাতে এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

জীবনী ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৬০ সালের ৩১ আগস্ট লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বাজারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফাতিমা ইয়াসিন নামে এক নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের সংসারে পাঁচটি সন্তান রয়েছে। নাসরুল্লাহর বড় ছেলে হাদি ১৯৯৭ সালে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হন।

নাসরুল্লাহ শিয়া মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭৯ সালে আমল আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে ইসরাইলি আক্রমণের বিরোধিতা করে তিনি হিজবুল্লাহতে যোগ দেন এবং সংগঠনটির বেকা উপত্যকায় যোদ্ধাদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পান।

১৯৯২ সালে নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং তার নেতৃত্বে সংগঠনটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে বহু অভিযান পরিচালনা করে। যার ফলে ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবাননে ২২ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটে এবং ইসরাইল লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

লেবাননের প্রতিরোধের প্রতীক

২০০৬ সালে লেবানন যুদ্ধের সময় ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে তার অঙ্গীকার তাকে আরব এবং ইসলামি বিশ্বের একজন জনপ্রিয় নেতায় পরিণত করে। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদকে হিজবুল্লাহর সমর্থনের কারণে তার সেই জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়ে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী আন্দোলন এবং হামাসের সমর্থনে দক্ষিণ লেবাননে নতুন ফ্রন্ট খোলার ঘোষণার পর, বিশ্বব্যাপী তার অবস্থান আবারও শক্তিশালী হয়।

হত্যার প্রেক্ষাপট

নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ২১ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছিল। তার মৃত্যু লেবানন ও গাজা উভয় ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে বিশ্বনেতারা চলমান এ লড়াইয়ের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানালেও, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে রয়েছি এবং আমাদের জনগণকে সুরক্ষিত করার জন্য এ হামলা চালিয়ে যেতে হবে’।

ইসরাইলি বিমান হামলায় ইতোমধ্যেই বৈরুতের বিভিন্ন এলাকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং ৭ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

এদিকে হিজবুল্লাহ প্রধানের নিহতের এ সংবাদ হিজবুল্লাহ এবং তার অনুসারীদের যেমন শোকের সাগরে নিমজ্জিত করেছে, তেমনি এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের চলমান সংঘর্ষের মধ্যে নাসরুল্লাহর মৃত্যু এ অঞ্চলে নতুন করে সংঘাতের শঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এমন প্রেক্ষাপটে হিজবুল্লাহও তাদের নেতাকে ‘মহান শহিদ’ আখ্যা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ‘গাজা ও ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এবং লেবানন ও এর সাহসী জনগণকে রক্ষায় প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে’।

 

সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক