হাবীবের মৃত্যু কি দুর্ঘটনা?, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত

হঠাৎ করে চলে যাওয়া সাংবাদিক হাবীব রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন তার বন্ধু, শিক্ষক ও স্বজনেরা। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় এই দাবি জানিয়েছেন হাবীবের স্বজনেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে হাবীবের বন্ধুরা এই সমরণসভার আয়োজন করেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, হাবীব কেন, আমার কোনো শিক্ষার্থীর স্মরণসভায় আসতে হবে, সেটা আমি ভাবিনি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চাইতেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বন্ধুত্বের সম্পর্কে আমরা বেড়ে উঠেছি। ওদের সাথে অনেক কাজ করেছি। ওরা যোগাযোগ ইশকুল করেছে। সেদিনও আমাকে একা একা রাতে চলাফেরা করতে নিষেধ করেছিল হাবীব। তখন আমি বলেছি, তোমরা থাকতে আমার ভয় কী? যারা আমাকে অভয় দেয়, তাদের একজন চলে গেছে। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন, শোকসভায় বক্তৃতা করা। সেটা যদি শিক্ষার্থীর হয়, তাহলে আরো কঠিন। তার সাথে যোগাযোগটা সব সময়ই ছিল। তার খবরটি দেখে আমার বিশ্বাস হয়নি। অনেকে এটা দুর্ঘটনা কি-না, সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। অনেকে আবার দুর্ঘটনা বলছে। যারা এটাকে দুর্ঘটনা বলছে, এই কনক্লুশনে কীভাবে এত তাড়াতাড়ি গেছে। আমি চাই, একটা সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তদন্তের ফল বের হোক। হত্যাকণ্ডের কারণ বেরিয়ে আসলে আমরা শান্তি পাব। ’

প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব সাখাওয়াত মুন বলেন, ‘হাবীবের জাদুকরি মুখ স্মরণ করছি। বসে বসে তার ছেলেটিকে দেখছিলাম। ও বুঝতেই পারছে না, ও কী হারিয়েছে। আমি মধ্যবয়সে এসে বাবাকে হারিয়েছি। সেটিই এখনো বুঝতে পারছি না। আমরা তার পাশে থাকবো। ’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, এই প্রতিশ্রুতিশীল ছেলেটি আমার বন্ধু ছিল। আমি কোনো স্মৃতিচারণ করতে চাই না। কারণ সে আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে। হাবীব যেভাবে নিহত হয়েছেন, এ রকম ঘটনা চাই না। আপাত দৃষ্টিতে এটাকে সড়ক দুর্ঘটনা মনে হয়েছে। কিন্তু আমরা এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চাই। ’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘হাবীব ভাইয়ের মতো এমন দেশপ্রেমিক সাংবাদিক চলে গেছেন। পরিকল্পিত কোনোভাবে হয়েছে আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। যদি পরিকল্পিতভাবে তার খুন হয়ে থাকে, তাহলে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। ’

হাবীবের বন্ধু আলী আসিফ শাওন বলেন, হাবীবকে নিয়ে বলতে গেলে কয়েকদিন বলতে পারব। পরিবারের বাইরে যার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকতো, সেটা হাবীব। মৃত্যু যে এভাবে মানুষকে এভাবে কেড়ে নিয়ে যাবে, এটা ভাবতে পারিনি। আমারও দাবি, হাতিরঝিলের ঘটনার তদন্ত চাই। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, এই ঘটনার তদন্ত হোক। ’

হাবীবের স্ত্রী হাসি আক্তার রিমি বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, ওর সাদা কালো ছবি এভাবে থাকবে, আর আমি ওর জন্য কথা বলবো। আমার সব ছিল হাবীব। আমার সংসার, আমার ভালোবাসা। আর হাবীবের সব ছিলেন আপনারা। এটাই ওর ভালোবাসা ছিল৷ ও যা ভালোবাসতো, আমিও তা ভালোবাসতাম। আমি ওর কাজের জন্য কখনো বিরক্ত হইনি।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল মনসুর আহাম্মদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, হাবীবের বন্ধু পুলিশ কর্মকর্তা তয়াসির জাহান বাবু, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন  প্রিন্স প্রমুখ স্মৃতিচারণ করেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ