হাতের তালু থেকে ম্যাচটা ফেলে দিয়েছি : পাকিস্তান অধিনায়ক

টেস্ট ক্রিকেটে আসলেই এক অদ্ভূত খেলা। পন্ডিতরা বলে থাকেন গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। আর পাকিস্তান হচ্ছে সেই গৌরবময় অনিশ্চয়তার বড় উদাহর। যাদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। কখন কি করবে তারা, তা আগে থেকে বলা মুস্কিল।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ফাঁকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের জয়টা বলতে গেলে কেড়েই নিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস। তবে, এটাও পাকিস্তানের অবদান। ক্রিস ওকসকে যদি থার্ড স্লিপে শাহিন শাহ আফ্রিদি ছেড়ে দিয়ে বাউন্ডারি না বানাতেন, তাহলে গল্পটা ভিন্নও হতে পারতো। থার্ড স্লিপে ক্যাচ নেয়ার মত একজন ভালো মানের ফিল্ডারের বেশ অভাব বোধ করেছে পাকিস্তান।

শেষ পর্যন্ত বিজয়ের উল্লাসে মেতেছে ইংল্যান্ড। একই সঙ্গে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের এই ম্যাচ দেখিয়ে দিলো, টেস্ট ক্রিকেট এখনও সত্যিকার বিনোদন দিতে সক্ষম। কারণ, শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ বলতে পারে না, কোথায় গিয়ে শেষ হবে এই ম্যাচটি।

চারদিন আগে যেভাবে ম্যাচটি শুরু হয়েছিল, কেউ ভাবতে পারেনি পরিণতিটা এমন হবে। যদিও সিরিজে পাকিস্তানের কামব্যাক করার এখনও দারুণ সুযোগ রয়েছে। তবে, ২ বছর আগে পাকিস্তান যখন ইংল্যান্ড সফরে এসেছিল ওই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত তারা কোনো অ্যাওয়ে সিরিজ জেতেনি।

এর মধ্যে আবার একটা অন্তর্বর্তীকালীন সময় পার করেছে পাকিস্তান। এর মধ্যে গত বছর তারা অধিনায়ক পরিবর্তন করেছে এবং চেষ্টা করছে দলের মধ্যে টগবগে রক্তের প্রবাহ ঠিক করতে। এর মধ্যেই পাকিস্তানের বোলিং অ্যাটাক এখন অনেক ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুর্দান্ত কয়েকজন পেসারের আগমণ ঘটেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই বোলিং অ্যাটাক দুনিয়া শাসন করবে।

অন্যদিকে পাকিস্তান গত কয়েকমাস ধরে কোনো ক্রিকেটই খেলছে না। বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই সিরিজেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দুটি টেস্ট ম্যাচ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছে ইংলিশরা। এখানেই পাকিস্তানের মোকাবেলা করে ইংল্যান্ড।

টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর শান মাসুদের দুর্দান্ত ১৫৬ রানের ইনিংস এবং বাবর আজমের হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৩২৬ রানের মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তোলে পাকিস্তান। জবাবে মাত্র ২১৯ রানেই শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ১০৭ রানের লিড পায় পাকিস্তান।

দ্বিতীয় ইনিংসে মোটামুটি একটা স্কোর দাঁড় করাতে পারলেই জয় নিশ্চিত। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে পুরো উল্টো চিত্র। এবার পুরোপুরি ধ্বসে পড়ে। এবার মাত্র ১৬৯ রানেই অলআউট হয়ে যায়। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২৭৭ রান। এর মধ্যেই পাকিস্তান ভেলকি দেখিয়েছিল । ১১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা ইংল্যান্ডকে টেনে তোলেন ক্রিস ওকস আর জস বটলার। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জয় ৩ উইকেটের ব্যবধানে।

পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলি মনে করেন, ম্যাচ তাদের হাতের তালুর ওপর ছিল। সেখান থেকে ফেলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলবো না যে, আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচটা হেরেছি। কিন্তু আমরা ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে নকআউট করে দেয়ার যে সুযোগগুলো পেয়েছিলাম, সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। এটা হচ্ছে সুযোগ হারিয়ে ফেলার ফল।’

আজহার আলি আরও বলেন, ‘আমরাই ছিল ম্যাচে নিয়ন্ত্রকের আসনে। জয়টা যেন আমাদের হাতের মুঠোয় ছিল। আমরা চিন্তা করছিলাম, আর একটা কিংবা ২টা উইকেট নিতে পারলেই জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু উল্টো তারা আক্রমণ করে বসলো এবং আমাদের থেকে ম্যাচটা নিয়ে নিলো। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো একটা স্কোর করতে পারিনি বলেও আফসোস হচ্ছে। যে কারণে অন্তত ৩০০ প্লাস লক্ষ্য তাদের সামনে ছুড়ে দিতে পারেনি। এটাই আমাদের পরাজয়ের মূল কারণ।’