সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ২১ কোম্পানি প্রায় এক হাজার মামলায় জড়িয়ে আছে। এসব মামলার অধিকাংশই গ্রাহক ও কোম্পানির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে। দিনের পর দিন এসব মামলা চলছেন আদালতে। বিভিন্ন কোম্পানির সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহক মামলায় জিতে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মামলার রায় গ্রাহকের পক্ষে যাচ্ছে। ফলে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উচ্চ আদালতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চারটি, বাংলাদেশ তৈল-গ্যাস-খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলার) ৩২টি, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ৪৭টি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চারটি, খনিজসম্পদ ব্যুরোর (বিএমডি) চারটি, হাইড্রোকার্বন ইউনিটের ১৭৫টি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্সে) ৪৭টি, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) দুটি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) দুটি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) ২৪টি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) দুটি ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) ২১টি মামলা রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৪৩৯টি। এ ছাড়া রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) সাতটি, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিসিএল) ১৪টি, সিলেট গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন
কোম্পানির (এসজিএফএল) ১৬টি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (জেজিটিডিএএল) ৭২টি, মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির (এমজিএমসিএল) ১০টি, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তিনটি এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের পাঁচটি মামলা রয়েছে। এই হিসাব চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত।
জ্বালানি বিভাগের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানা কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহক, ঠিকাদার বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ মামলা করছে। তবে সব কোম্পানিতেই মামলা দেখার জন্য আইন শাখা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছে। কোনো কোনো মামলা বছরের পর বছরও চলছে। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোতে। বিশেষ করে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে মামলার সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন গ্রাহক, কোম্পানি বা শিল্পকারখানার বিল বকেয়া, লোড বৃদ্ধি বা অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে মামলা বা জরিমানা করা হলে অনেকেই সংক্ষুব্ধ হয়ে নিয়মের বাইরে গিয়ে পুনরায় সংযোগ বা বিল পরিশোধ করতে চায় নিজেদের ইচ্ছেমতো। ফলে কোম্পানিগুলো আইনের ব্যত্যয় হবে বিবেচনায় যা করে না, তা তখন কোর্টের অধীনে চলে যায়।
এই কর্মকর্তা বলেন, মামলায় যাওয়ার অধিকার গ্রাহকের আছে। কোর্ট রায় দিলে সেটি বিবেচনা করবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক মামলায় গ্রাহক জিতে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো লোকসানের মধ্যে পড়বে। তিনি বলেন, মামলায় গ্রাহকদের জেতার কারণ হচ্ছে কোম্পানিগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কোম্পানির পক্ষে মামলা তুলে ধরছে না। যদি কর্মকর্তারা আদালতে সঠিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন, তা হলে হয়তো রায় হবে ভিন্ন।
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লা বলেন, অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের দায়ে আমরা হয়তো কোনো কারখানাকে আইন অনুযায়ী জরিমানা করেছি। এখন সেই কারখানা জরিমানা পরিশোধ করতে চায় না। এ অবস্থায় তো আমরা পুনঃসংযোগ দিতে পারব না। সে ক্ষেত্রে ওই শিল্পকারখানা আদালতে যেতে পারে। এ ছাড়া গ্যাস স্বল্পতার কারণে জ্বালানি বিভাগ গ্যাস সংযোগ বা লোড বৃদ্ধির বিষয়গুলো ধীরগতিতে চালাতে চায়। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রেও ধীরগতি গ্রহণ করেছে। সেটা বিদ্যমান গ্রাহকদের গ্যাস প্রাপ্তির বিষয় বিবেচনা করে। এখন এসব ক্ষেত্রে কোনো কোনো গ্রাহক হয়তো আদালতে মামলা করেছে। তিনি বলেন, তবে আমরা এসব মামলা ঠিকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আদালতের রায় দিলে সেটিও আমরা পালন করছি।