শনিবার , ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

হাজার কোটি টাকার সম্পদ গোপন সাবেক এমপি এনামুলের: ধোরা-ছোঁয়ার বাইরে

Paris
আগস্ট ২৪, ২০২৪ ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ ৪১ জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি এনামুল হকের নামও আছে। এর আগে ২০১৪ সালেই এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গোপনের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় দুদক তদন্তে নেমেও পরবর্তিতে অজ্ঞাত কারণে সেই তদন্ত আর মাঠে গড়ায়নি। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়ে আওয়ামাী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতাকে দিয়ে তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছিলেন। ওই নেতাকে এমপি এনামুল একটি বাড়িও করে দিয়েছেন বলে তিনি বিভিন্ন সময় দাবি করেন।

কথিত রয়েছে রাজশাহীর দুজন এমপির মালেশিয়াতে বাড়ি-গাড়ী ও ব্যবসা রয়েছে। এর মধ্যে এনামুলও রয়েছেন। মালেয়শিয়ায় তার পাম বাগানের প্রকল্পসহ একটি কারখানাও রয়েছে। এর বাইরে এনামুলের বিরুদ্ধে রয়েছে নারী ক্যালেঙ্কারী, জমি দখল, নিয়োগবাণিজ্য, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ। একের পর এক নানা অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাবেক এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও শাস্তি স্বরুপ গত সংসদ নির্বাচনে তাঁকে আর মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। ওই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছিলেন আরেক বিতর্কিত নেতা আবুল কালাম আজাদ। আর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এনামুল।

দুদক সূত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সূত্র মতে, ২০১৪ সালে রাজশাহীর বাগমারা থেকে তৎকালীন নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হকের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের তথ্য-উপাত্ত পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই সময় এনামুল প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলেও দুদকে সরবরাহ করা সম্পদবিবরণী এবং নির্বাচনী হলফনামায় বেশির ভাগ সম্পদের তথ্য গোপন করেছিলেন। ওই সময় এনামুলকে দুদক কার্যালয়ে হাজিরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে ওই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি অজ্ঞাত কারণে। এতোদিন পরে অবশ্য দুদক আবারো সাবেক এমপি এনামুলের আয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্রমতে, এনামুল হক ও তাঁর স্ত্রী তহুরা হক সম্মিলিতভাবে মাত্র আট কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদবিবরণী দাখিল করেন দুদকে। কিন্তু ওই সময়ই তাঁর সম্পদ ছিল অন্তত দেড় হাজার কোটির টাকার।

দুদকের ওই সমেয় প্রাথমিক অনুসন্ধানে যে তথ্য পায়-তাতে, এনামুল হকের মালিকানাধীন লিমিটেড কম্পানি, প্রোপ্রাইটরশিপ ও পার্টনারশিপে থাকা ১৪ প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করা হয়। এ ছাড়া এনা প্রোপার্টিজ, সালেহা-ইমারত কোল্ডস্টোরেজ, এনা-ডুঙ্গা লিজিং, নর্দান পাওয়ার সল্যুশন লিমিটেড, এনা ইন্টারন্যাশনাল, এনা কারস, এনা এনার্জি লিমিটেডসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে তাঁর শেয়ার বা মালিকানার বিষয়টি সম্পদবিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন না।

সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে এনামুল হক সম্পদের তথ্য গোপন করেছিলেন। তাঁর নামে ১৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছিল সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তবে দুদকের অনুসন্ধানপ্রক্রিয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ), রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পিপলস লিজিং কম্পানি, ব্যাংক আল-ফালাহ, ব্র্যাক-ডেল্টা হাউজিং, রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার, বাগমারা, নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, নাটোর সাবরেজিস্ট্রার, ঢাকার ১৩টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে এনামুল হক ও তাঁর স্ত্রী তহুরা হকের নামে অর্থ ও স্থাবর সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিপুল সম্পদের তথ্য পায়।

সূত্র মতে, সম্পদ গোপন করা ছাড়াও সাবেক এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে নারী ক্যালেঙ্কারীসহ অভিযোগের পাহাড় জমা হয় বিভিন্ন দপ্তরে। গত নির্বাচনের বেশ কিছুদিন আগে পর পর দুটি নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ফোনালাপের রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়।

বাগমারার আক্তার হোসেন নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, ‘এনামুলের বিরুদ্ধে বাগমারায় ইটের ভাটা, জমি দখল থেকে শুরু করে অভিযোগের শেষ নাই। নৈশপ্রহরী, স্কুল-কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, তদ্বির বাণিজ্য, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যেও পটু ছিলেন এ সাবেক এমপি।’

দুর্গাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘ইউনিয়ন নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন সাবেক এমপি এনামুল। এ নিয়ে কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়েছিল। তার পরেও টাকা ফেরত পাননি জাহাঙ্গীর আলম।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে আদালতের জব্দ করা সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে সাবেক এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে। জমির মালিক ও মেট্রো হোমস লিমিটেডের মধ্যে মামলা জটিলতার সুযোগে ওই জায়গাটি দখল করেন এনামুল। মেট্রো হোমসের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন একটি বাণিজ্যিক ভবন ও জায়গা আদালত কর্তৃক জব্দ ও স্থিতাবস্থার আদেশ থাকা সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের এনা গ্রুপ ওই জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করেছেন বলে মেট্রো হোমসের চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলে অভিযোগে করেন।

দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ছিল এনামুলের খারাপ সম্পর্ক। ফলে গত নির্বাচনের আগে বাগমারায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন এনামুল। দলের মনোনয়নও বঞ্চিত হয়েছিলেন সেসব কারণে।

তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাবেক এমপি এনামুল হককে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে গত ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের মতো এনামুলও আত্মগোপনে রয়েছেন।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর