হাজারো শামুকখোলের বাস যেখানে

শফিক আজম:
প্রচলিত আছে “প্রকৃতির কাছে আছে অনেক কিছুই জানা”। আর তা থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই। প্রকৃতির মত অনাবিল আনন্দ বুঝি আর কোথাও নেই। সকালের পাখির কলতান যেমন ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয় তেমনি তারাও ব্যস্ত হয়ে যায় নিজেদের কাজে। পেট পূজানোর তাগিদে কেও যায় খাবার সংগ্রহ করতে আবার কেও যায় ঘর বুননের জন্য খড় সংগ্রহ করতে।
সময় সকাল ৮ টা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বাউসা গ্রাম। গ্রামের মেঠোপথে হাটতে গিয়ে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দূর থেকে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ২/৩ টি মেশিনের আওয়াজ পাওয়া যায়। জানা যায়, এই আওয়াজ নাকি দিনভরই পাওয়া যায়। আওয়াজ শুনে কাছে গিয়ে জানা গেল তা শ্যালো ইঞ্জিনের নয়, শামুক খোল পাখির। শামুক খোল পাখির তেমন কোন ডাক নেই। তবে এত বেশি শব্দের কারণ হলো তাদের সংখ্যা। প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার শামুক খোল পাখির বাস এখানে। মাথার উপর দিয়ে কিছুক্ষন পর পরই একটি দুটি শামুকখোল দেখা যাবে মুখে খর কুটো সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রীষ্ম এবং বর্ষা এই দুই মৌসুম জুড়ে শামুক খোল পাখিরা এসে বাসা বাধে এখানে। বিশালাকার ঝাক ডানা মেলে যখন আসে তখন নাকি সূর্যের আলো তাদের ভেদ করেনা। বর্ষার শেষ ভাগে তারা ডিম দেয়া শুরু করে। দুটি করে ডিম দেয় প্রতিটি জোড়ায়। এর পর বাচ্চা ফুটলে তা কিছুটা বড় হয়ে উড়তে শিখলে শীতের আগেই মা পাখির সাথে উড়াল দেয়। তবে এ পাখি অনেক শান্তি প্রিয়। নিজেদের অবস্থান পছন্দ করে সেখানে বাসা বাধে যেখানে কেও তাদের ক্ষতি করতে পারে না।
তবে যেটাই হোক না কেন, দিনভর পরিশ্রম করে খড়কুটো সংগ্রহ করার কাজটা মুগ্ধ হয়ে দেখেন সেখানকার লোকজন। বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছেই ঝাকে ঝাকে বাসা বেধে রেখেছে এ শামুক খোল পাখি। তাদের এই ব্যস্ততা অনুপ্রেরণা দেয় গ্রামের মানুষদের। গেল বর্ষায় ঘরের অনেক ক্ষতি হওয়ায় অনেক পাখি চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে আবারো সেই একই স্থানে ফিরে বাসা বাধে এই পাখি। আবারও হাসি ফোটে জনমনে।
ওই এলাকার খোর্দ্দ বাউসা জামে মসজিদের ঈমাম আব্দুল খালেক বলেন, প্রায় বছর পাচেক হলো এই পাখিরা এখানকার গাছে আসা শুরু করেছে। এখানকার পরিবেশটা হয়ত তাদের পছন্দ, আবার তাদের কারণে আমাদের এলাকার পরিবেশটাও অনেক সুন্দর লাগে। প্রকৃতি প্রেমীরা এখানে এসে অবাক হতে পারেন যে একসাথে এত সংখ্যক পাখি একই স্থানে আছে। আমাদেরও অনেক ভাল লাগে তাদের উড়তে দেখে।
রেজাউল ইসলাম নামের কৃষক বলেন, এরা সাধারণত কারো বাড়ি, ফসলের জমিতে গিয়ে বসে ফসলের ক্ষতি করে না যার কারণে সবাই এদের ভালবাসে। তাদের উড়োউড়িটাও আমাদের অনেক ভাল লাগে। আমাদের এলাকার একটি অংশই হয়ে গেছে পাখি গুলো।
ক্ষতিকর ঝড় থেকে বাসা বাচানো আর কাক থেকে ডিম বাচার কোন বুদ্ধি নেই। তাই শামুকখোল পাখিরা দলবদ্ধভাবে থাকতে ভালবাসে। আত্মরক্ষার জন্য রয়েছে বিশালাকার ডানা আর লম্বা ঠোঁট। এ দিয়েই নিজেদের আর অন্যদের পাশে থাকে শামুক খোল। প্রকৃতিতে শান্তভাবে থাকলেও গোপনে মানুষের ভোগের শিকার হয় শামুকখোল। সবার চোখের আড়ালে শিকার হয় শামুকখোল পাখিরা। রাতের আধারে তাদের শিকার করে রান্নাও করা হয় পাখিদের। এ শিকার বন্ধে কোন  তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়না কেউই।
এ বিষয়ে আড়ানী ‍ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখিগুলো আমাদের অতিথি। তাদের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বটা আমাদের। পাখিগুলোর কারণে ওই গাছগুলোর প্রাথমিক ক্ষতি সাধন হলেও বাগান মালিকেরা তাতে আপত্তি জানান না। এগুলো আমাদের পরিবেশেরই অংশ। এই এলাকা অতিথি পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য বলা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কেউ কোন ভাবে পাখি শিকার করলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। রাতের আধারে কেউ এদের শিকার করলে তাদেরও আমরা ব্যবস্থা নিই। যতদিন পাখি থাকবে ততদিন আমাদের নজরদারিতেই থাকবে।
স/আ

Comments are closed.