হাইকোর্টে জামিন চেয়েছেন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সেই ওসি মোয়াজ্জেম

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফেনীর সোনাগাজী থানার সেই সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন। চাঞ্চল্যকর ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছিলেন সাবেক এই ওসি।

বুধবার (২২সেপ্টেম্বর) বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে তার জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ১৪ নম্বরে রয়েছে।  রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করবেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী।

নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ওসি মোয়াজ্জেম হাইকোর্টে আগেই আপিল করেছেন বলেও জানান এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আলোচিত আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

তদন্ত শেষে ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

১৬ জুন হাইকোর্ট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৭ জুন তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।

১৭ জুলাই আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এরপর ২১ জুলাই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ১২ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শেষ হয়।

১৪ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে ওসি মোয়াজ্জেম ট্রাইব্যুনালের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার এদিন (বৃহস্পতিবার) ধার্য করেন আদালত।

পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ মার্চ দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ, প্রচার ও তা ভাইরাল করেছেন।

ওসি মোয়োজ্জেম হোসেন সু-শৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর সদস্য হয়েও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানির ঘটনার বক্তব্য ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যার ফলে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জানান রাফি। সেখানে কয়েকজন তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে বলে। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে মামলা করেন।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। ২৪ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা হয়।

রায়ে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। সেই রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে শুনানির জন্য হাইকোর্টে রয়েছে।

অপরদিকে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যৌন নিপীড়নের ওই ঘটনাকে ‘নাটক’ ও পরে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে ‘আত্মহত্যার’ রূপ দিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

নানা অভিযোগে ১০ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগ ছিল।

২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ছাগলনাইয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে। সেখানে ঘুষ কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ চুরি, মামলার আলামত চুরি করে বিক্রি করা, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া, টোকেন দিয়ে নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসোহারা আদায়, ভুয়া মামলা দিয়ে অর্থ আদায়, নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের চাঁদাবাজি- এমন অসংখ্য অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

ওসি মোয়াজ্জেমের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকায়।

সূত্র: যুগান্তর