হযবরল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে হযবরল অবস্থা। সম্প্রতি সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ করোনায় মারা যাওয়ায় সে পদে সহসভাপতি আবদুল আলীম নকিকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম যুগ্ম সম্পাদককে ‘ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক’ করার কথা। কিন্তু তা না করে সহসভাপতিকে বেছে নেয়া হয়েছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই শাখার নেতারা চরম ক্ষুব্ধ। গঠনতন্ত্র না মানার অভিযোগ তুলে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা। কেন্দ্রের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট জবাব না পেলে একাধিক নেতা পদত্যাগেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নানা সমস্যা চলছে। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর উত্তরের ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) নির্বাহী কমিটি অনুমোদন করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই একটি অংশ অভিযোগ তোলেন সভাপতি এমএ কাইয়ুম দেশের বাইরে (মালয়েশিয়া) থেকে কিভাবে দল পরিচালনা করবেন? এরপর ২০১৮ সালের ৪ মে উত্তরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ওই সময় নির্বাহী কমিটির ৩৭ জন নেতাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে বাণিজ্য, নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের শীর্ষ পদে বসানোসহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিবের কাছে লিখিত দেন। এ অবস্থায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে মালয়েশিয়া অবস্থানরত উত্তরের সভাপতির স্ত্রী শামীম আরা বেগমকে ঢাকা-১১ আসনে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। আর ঢাকা-১৬ আসন থেকে মনোনয়ন পান সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। যে কারণে উত্তরের একটি বড় অংশ নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে নীরব ছিলেন।

নেতারা জানান, উত্তরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি বারবার হাইকমান্ডকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। সবশেষ সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ হাসানের মৃত্যুর পর পদটি শূন্য হলে তার স্থলে গত ২২ জুন সহসভাপতি আবদুল আলীম নকিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম যেখানে স্থগিত আছে। সেখানে কেন তড়িঘড়ি করে প্রথম যুগ্ম সম্পাদককে ওই পদ না দিয়ে সহসভাপতিকে দেয়া গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার  বলেন, গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবে। প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অপারগতা প্রকাশ করলে পরবর্তী যুগ্ম সম্পাদক দায়িত্ব পালন করবে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো জায়গায় নিয়োগ দেয়ার একক ক্ষমতা চেয়ারপারসন অথবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আছে এটা তো জানি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব নিয়োগ অবশ্যই মহাসচিব স্বাক্ষরিত হতে হবে। যখন মহাসচিবকে ফোন দিলাম তিনি বললেন, ‘আমি জানি না, আমাকে জানানো হয়নি।’ যেখানে তিনি (মহাসচিব) জানেন না, সেখানে আমি ধরে নিতেই পারি বিষয়টা অন্য কিছু। উপর মহলকে ভুল বুঝিয়ে এটা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি আমি নিশ্চত হই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন তাহলে এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি নিশ্চিত না হই অবশ্যই এই নিয়োগ অবৈধ। আমার দাবি এই নিয়োগ স্থগিত করে নতুনভাবে গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হোক। আমি মঙ্গলবার (আজ) পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখব। এরপর সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

মহানগর উত্তরের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুমকে রাখতে গিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে কি সংগঠন থাকবে? এভাবে চললে থাকবে না। মহানগর উত্তরের সবাই এখন ক্ষুব্ধ। বিএনপি যেখানে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে, সেখানে যদি দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে চেয়ারপারসনের। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেটা গ্রহণ করে থাকেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এখানে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হয়নি। বড় দলে পদ নিয়ে অনেকে মনোক্ষুণ্ন হতেই পারে। আশা করি নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবেই দলকে শক্তিশালী করবেন।

মহানগর উত্তরের নেতারা জানান, তারা কয়েক দিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগসহ থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে আবারও লিখিত অভিযোগ জানাবেন। বিষয়টির সুরাহা না হলে একযোগে পদত্যাগের সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে। উত্তরের একজন সহসভাপতি জানান, আমরা অধিকাংশ নেতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে একাট্টা। যে কারণে গত শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেও সেখানে ছিলেন মাত্র ৭ জন নেতা। আর কেউ যাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এই দলটার প্রতি টান থেকেই ৩৬ বছর ধরে রাজনীতি করছি। ১২৮টি মামলা নিয়ে ঘুরছি। জীবনটা শেষ করলাম বিএনপির রাজনীতি করে। আর এখন কি হচ্ছে তার কোনো মানে বুঝি না। মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি বলেন, সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে আমার ভাইটা (সাধারণ সম্পাদক) মারা গেছে, তার পরিবারের একটি শোকেরও তো ব্যাপার আছে। ৪০টা দিন যেত দিত। তারপর এই পদে নিয়োগ দেয়া যেত।

 

সুত্রঃ যুগান্তর