হতাশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য মনোবিদ নেই রুয়েটে

গোলাম রববিল:

 

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের তিনদিনের মাথায় আরেক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ওই শিক্ষার্থীদের বিভাগ, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হতাশা থেকে তারা আত্মহত্যা করতে পারেন। এঘটনায় রুয়েটের শিক্ষার্থীদের একাংশ রুয়েটে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা কিংবা মেডিকেল সেন্টারে সাইকোলজিস্ট নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। রুয়েটের শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছেন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত লেখাপড়ার অনেক চাপ থাকে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হয়। বিনোদনের সুযোগ খুব কম পায় তারা।

 

সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছুটি থাকে, তবে অ্যাকাডেমিক ও ল্যাবের পড়াশোনার পিছনে ওই দুইদিনও ব্যস্ত সময় যায়। এতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ কম পান। যে কারণে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে অনেকে ভেঙ্গে পড়েন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কমপক্ষে একজন সাইকোলজিস্ট (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) থাকা উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস ও ল্যাব শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে যায়। খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ কম। মাঝেমধ্যে ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে কথা বললে একটু ভালো লাগে। কিন্তু ডিপ্রেশন একেবারে চলে যায় না।

 

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র আছে।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, জরুরীভাবে এখানে সাইকোলজিস্ট প্রয়োজন। এতে করে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে সাপোর্ট পাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের অ্যারবান এন্ড রিজন্যাল প্ল্যানিং বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, সকাল ৮টা থেকে ক্লাস শুরু হয়, যদি ল্যাব থাকে তাহলে বেলা ৩টা বেজে যায়। বিভাগের শিক্ষকরা পড়াশোনায় অনেক বেশি চাপ দেয়। এছাড়াও শিক্ষকদের মনঃক্ষুব্ধ করলে পরীক্ষার ফলাফলে নেগেটিভ প্রভাব পড়ে। তিনি আরও বলেন, মানসিক চিকিৎসকের থেকে বেশি দরকার শিক্ষকদের বন্ধুসূলভ আচরণ। শিক্ষকরা পাশে থাকলে যেকোনো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে সবার মন-মানসিকতা যেহেতু সমান না, তাই মেডিকেলে সাইকোলজিস্ট থাকলে ভালো হয়।

 

রুয়েট প্রশাসন ও মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থী ৫,৯২৮ জন। এতো বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য ডাক্তার রয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন, ডা. মো. মকছেদ আলী, মো. আজিজুল হক এবং ফারহানা রহমান। তাদের মধ্যে একজনও সাইকোলজিস্ট নয় এবং গড় ১৯৭৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য ডাক্তার মাত্র একজন। এ বিষয়ে রুয়েট মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মোকছেদ আলী বলেন, বর্তমান মেডিকেল সেন্টারে কোনো সাইকোলজিস্ট নেই। তবে বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবেন।

 

রুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ারের পরিচালক অধ্যাপক রবিউল আওয়াল বলেন, করোনার পরে শিক্ষার্থীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য সাইকোলজিস্ট নিয়োগসহ মেডিকেল সেন্টারে অন্যান্য বিষয়ে চিকিৎসক নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং প্রস্তাবও গৃহীত হয়। কিন্তু অনিয়মিত উপাচার্য থাকার কারণে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাস হয়নি। তবে এবার অতিদ্রুত অস্থায়ীভাবে হলেও নিয়োগ দেওয়া হবে। রুয়েটের উপাচার্য (অনিয়মিত) অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সাইকোললিস্ট নেওয়া হবে।

 

রুয়েট ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে গত ১৭ মে দুপুরে রুয়েটের লেফটেন্যান্ট সেলিম হলের ৩৫৫ নম্বর কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তানভীর ফাহাদ রুমির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বিভাগ ও তানভীরের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তানভীর তৃতীয়বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার (ইভেন) পর্যন্ত মোট ৩০টি বিষয়ের মধ্যে ১৪টিতে অকৃতকার্য হয়। লাশ উদ্ধারের আগে তার প্রকাশিত তৃতীয়বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার (ইভেন) পরীক্ষায় ৫টি বিষয়ের মধ্যে ৪টিতে অকৃতকার্য হয়। এতে তিনি ভীষণ ভেঙ্গে পড়েন। তার সিজিপিএ তিন পয়েন্টের নিচে বলে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

 

তানভীরের ফেসবুক প্রোফাইলে গত ৯ মে ‘ভার্সিটিতে সবচাইতে বেশি ম্যাটার করে, সেইটা সিজি, ভালো রেজাল্ট…’ শিরোনামে একটা পোস্ট দেন। সিজি ভালো না হওয়ায় ওই পোস্টে তিনি হতাশাও প্রকাশ করেছেন। তানভীরের বড়ভাই আবুল হাসনাত বলেন, আমি ওর (তানভীর) কাছ থেকে শুনেছিলাম দুইটা বিষয়ে খারাপ করেছে। আবার পরীক্ষা দিলে ঠিক হয়ে যাবে। ওর ফিনল্যান্ডে যাওয়ার সব প্রস্তুতি করে রেখেছিলো ওর মেজে ভাই। কিন্তু ওর এতো রেজাল্ট খারাপ, সেটা বিভাগ থেকে আমাদের জানালে ভাইটাকে হারাতাম না। দরকার হলে তাকে রুয়েট থেকে নিয়ে যেতাম।

 

এ বিষয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রবিউল ইসলাম সরকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ৩ দিনের ব্যবধানে গত ২০ মে রাত ১২টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানার সাধুর মোড় এলাকার এক ছাত্রাবাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সামিউর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

স/আর