সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
জন্মের পর থেকে ঠোঁট ও তালু কাটা নিয়ে তারা ছিল সমাজের কাছে বোঝা এবং অবহেলার পাত্র। এসব শিশু এখন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
বিনামূল্যে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ৫ শতাধিক শিশু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে। এসব দরিদ্র শিশুদের অপারেশনসহ সব খরচ বহন করেছে পাবনা মুসলিম এইড কমিউনিটি হাসপাতাল।
ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এসে গত তিন বছরে ৫০টি ক্যাম্পের মাধ্যমে এসব শিশুদের অপারেশন সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে মানবসেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন বলে মনে করেন রোগীদের অভিভাবক ও পাবনার সচেতন মহল।
৮ মাস বয়সের ঠোঁট কাটা রোগী সামির হোসেনের বাবা সদর উপজেলার সাদীপুর গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, জন্মের পর থেকে তিনি তার সন্তান নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চরাঞ্চলের অতিব দরিদ্র হওয়ায় অপারেশনের টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে যায়।
পরে তিনি জানতে পারেন পাবনা মুসলিম এইড হাসপাতালে বিনামূল্যে এই অপারেশন করা হবে। তখন তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে তার সন্তানের অপারেশন সম্পন্ন করেন। এখন তার সন্তানের মুখ স্বাভাবিক।
সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের মো. হামিদুল্লাহ জানান, তার ছেলে কিফাত উল্লাহকে (২) নিয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। তিনি শুনেছেন এসব অপারেশন করতে ৫০ হাজারের মতো টাকা লাগে। এতো টাকা জোগাড় না করতে পেরে তিনি ভেঙে পড়েন। কিন্ত মুসলিম এইডের মাধ্যমে বিনামূল্যে তার ছেলেকে অপারেশন করতে পেরে তিনি এখন খুশি।
নাটোরের লালপুর থেকে আসা শরিফুল ইসলাম এবার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার ঠোঁট কাটা থাকায় স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না। ক্লাসের বন্ধুরা তার সঙ্গে হাসি তামাশা করত। মানসিকভাবে সে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিল। মুখ না দেখাতে অনেক সময় সবার আড়ালে থাকতে ভালবাসতো। লোক মুখে শুনে মুসলিম এইড হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে শরিফুল।
মুসলিম এইড হাসপাতাল পাবনার অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচআর অফিসার আইয়ুব আলী খান জানান, এখন প্রতিমাসেই এই ধরনের ক্যাম্প মুসলিম এইড হাসপাতালে আয়োজন করা হয়।
বিনামূল্যে এই ক্যাম্প থেকে দূর দূরান্তের ঠোঁট ও তালুকাটা রোগীদের উন্নতমানের অপরেশনের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক ও সুন্দর মুখচ্ছবি সম্পন্ন জীবন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি জানান, আমরা আশা করি মানুষের কল্যাণে এই ক্যাম্পের ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও চলমান থাকবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সাজ্জাদ খন্দকারের নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষ টিম এসব অপারেশন সম্পন্ন করেন।
ওই টিমের সদস্য ডা. মাজহারুল হক জানান, এসব অপারেশনে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্ত মুসলিম এইড এসব অপারেশনের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে থাকে।
তিনি আরো জানান, জন্মের পর এই ধরনের সন্তান হলে অনেকেই চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণকে দায়ী করে থাকেন। আসলে এসব কুসংস্কার। অনেকেই তার পরিবারের জন্য অভিশাপ মনে করে থাকেন। আর দরিদ্র গোষ্ঠির মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই রোগী পাওয়া যায়। ধনীর সন্তানদের খুবই সামান্য এই রোগ হয়ে থাকে।
মূলত পুষ্টির অভাবজনিত কারণে এই ধরনের রোগ হতে পারে। তবে অপারেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব বলে মাজহারুল হক জানিয়েছেন।
সূত্র: রাইজিংবিডি