স্বাধীনতার ৫০ বছরে জনগণের আশা-আকাংখা ভেঙে চুরমার করা হয়েছে: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতার ৫০ বছর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই ৫০ বছরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা দূরে থাকুক আরো বিভক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে সংহত করার চেয়ে আরো দূর্বল করা হয়েছে। জনগনের আশা-আকাংখা ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। এমন একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র গঠন করা হচ্ছে যেখানে ন্যায় বিচার দুষ্প্রাপ্য। বৈষ্যম্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

আজ সোমবার বিকালে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। তিনি জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে পাশাপাশি দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম-স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানসহ রনাঙ্গনের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা-লাখো ভাই-মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, জাপান,  জাতিসংঘ, ইউএসএইড, আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই স্বাধীনতা আমাদের জনগনের স্বপ্নের ফসল। এই স্বাধীনতার আমাদের দীর্ঘদিনের নিজেদের রাষ্ট্র নির্মাণ করার আকাংখার ফসল, এই স্বাধীনতা আমাদের কৃষক-কৃষানী, ছাত্র-ছাত্রী, পেশাজীবী-ব্যবসায়ীদের ঘামের ফসল, অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার কষ্টের আত্মবলীদানের মহান গৌরবের সম্পদ।একটি গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মা্ণের করার স্বপ্ন এই স্বাধীনতা।’

তিনি বলেন, ‘এই স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এই স্বাধীনতা এদেশে যারা সোনালী ফসল ফলায়, যারা পন্য উতপাদন করে, যারা শ্রম দিয়ে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তাদের সকলের। বিদেশী প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়ের, গার্মেন্টর্সে কর্মরত মা-বোনের, ক্ষেতে রৌদে পোঁড়া-বৃষ্টিতে ভেজা কৃষকের, ছাত্র-যুবক সকল পেশাজীবীর।’

তিনি বলেন, ‘আসুন এই পঞ্চাশ বছর পরে আমরা নতুন করে শপথ নেই- ১৯৭১ সালের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। যা আমাদের একটি উদার গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এগি্য়ে যাবে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে।”

‘আমরা যখন সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের চক্রান্ত চলছে। বর্তমানে অনির্বাচিত কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার এই চক্রান্ত করছে।’ বলেন তিনি।

দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, পাঁচ শতাধিক গুম-খুন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশি হামলা, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ,গুলি, গ্রেপ্তার, কারাগারে নির্যাতনে সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু, মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত কারাগারের কন্ডেম সেলে অন্তরীণ দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুতফুজ্জামান বাবর, লেখক মুশতাক আহমেদ কারা মৃত্যুবরণ প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার চেতনা আজকে ভুলন্ঠিত। একদলীয় শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের ভুয়া মোড়কে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। ভোটার বিহীন নির্বাচন। নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে পার্লামেন্ট ও  সরকার গঠন। আমাদের স্বাধীনতার সকল আশাগুলো ভেঙে খান খান করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই ৫০ বছরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা দূরে থাকুক আরো বিভক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে সংহত করার চেয়ে আরো দূর্বল করা হয়েছে। জনগনের আশা-আকাংখা ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। এমন একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র গঠন করা হচ্ছে যেখানে ন্যায় বিচার দুষ্প্রাপ্য। বৈষ্যম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভ্রান্ত ইতিহাস জানিয়ে বিভ্রান্তি করা হচ্ছে। আমরা সূর্বণ জয়ন্তীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেই সত্যকে অবধারিত করতে চাই, স্পষ্ট করতে চাই- যে সত্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম  ও যুদ্ধকে মহিমান্বিত করেছিলো, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আবারো সেই স্বপ্ন দেখাতে চাই-মুক্ত স্বদেশে, মুক্ত সমাজে, মুক্ত মানবিক কল্যাণময় রাষ্ট্রে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক সামাজিক বৈষ্যম দূর করতে চাই। আজকের যে শিশু তার জন্য একটি কল্যাণময় ভেবে ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাতে চাই। আমাদের সেই মহান সংগ্রামী যুদ্ধে যাদের যে অবদান তাকে তুলে ধরতে চাই, তাদের সকলকে সন্মান্বিত করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির সর্বগ্রাসী ধারণ সম্ভারর্মূর্তি ধারণ করেছে। অহংকার, দাম্ভিকতা, প্রতিহিংসা, সুস্থ গণতান্ত্রিক সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

গুলশানে হোটেল লেকসোরে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আয়োজনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনে এই অনুষ্ঠান হয়।

লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলের পরিচালনায় দলের শিল্পীরা দলীয় সঙ্গীত, ক্যারিওগ্রাফীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর ‘থিম সং’ এবং শিল্পী রেখা সুফিয়ানা, ইথুন বাবু এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বেবী নাজনীন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশ করেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরোত্তম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিক্রম, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহি বীর প্রতীক বক্তব্য রাখেন।

বর্ণাঢ্য এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদীন ফারুক, উকিল আব্দুস সাত্তার, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুল কাইয়ুম, শাহিদা রফিক, আব্দুল কুদ্দুস, মামুন আহমেদ, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিজন কান্তি সরকার, সুকোমল বড়ুয়া, এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার মুক্তাদির, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আসাদুজ্জামান রিপন ফজলুল হক মিলন, শ্যমা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, জহিরউদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলন, শিরিন সুলতানা, নাসের রহমান, ইশরাক হোসেন, খন্দকার মারুফ হোসেন, প্রচার ও  মিডিয়া কমিটির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আমিরুল ইসলাম আলীম, মীর হেলালউদ্দিন, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, মাহমুদা হাবিবাসহ দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রেদোয়ান আহমেদ, আহমেদ আবদুল কাদের, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুউদ্দিন মনি, সাহাদাত হোসেন সেলিম, আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ এহসানুল হুদা, আবু তাহের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ফারুক রহমান, মোস্তা্ফিজুর রহমান মোস্তফাসহ শরিক দলের নেতারাও ছিলেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ