স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি নাচোলের ৪শহীদের

নুরুল ইসলাম বাবু, নাচোল:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও চার শহীদ পরিবার আজোও সরকারী ভাবে রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি পায়নি। পায়নি সরকারী কোন সহায়তা। এমনকি এতোবছর ধরে এ শহীদ পরিবার গুেেলার খোঁজও রাখেনি কেউ। তাই বর্তমানে ওই পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছেন।

তথ্যসুত্রে জানা গেছে, চার শহীদ পরিবার হচ্ছেন, নাচোল পৌর এলাকার থানা পাড়ার শহীদ এমরান আলীর স্ত্রী মোসা-গিনি বেগম, কাদিকোলা গ্রামের শহীদ নূরমোহাম্মদ লুটুর স্ত্রী সাদেনুর বেগম, পুকুর পাড়ার আমির হোসেনের স্ত্রী জেবুন নেসা ও মোমিন পাড়ার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে শহীদ আমিনুল ইসলাম এর ভাই মো. হেলাল উদ্দিন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে এ-৪ জনকে হত্যা করেন বলে শহীদ পরিবার জানান। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত ২হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চিঠি ছাড়া আর কোন স্মৃতি নেই ওই পরিবারের কাছে। তবে নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহীদ এমরান আলী পরিবারকে, ও পুকুর পাড়ার আমির হোসেন এর পরিবারকে একটি করে শহীদ স্মারক প্রদান করা হয়েছে।

৭১’র যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন নাচোল পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ড’র পুকুর পাড়ার আমির হোসেন, তাঁর স্ত্রী জেবুন নেসা এখনো শুধৃ স্বামীর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছেন, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন কিন্তু ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া স্বাক্ষরিত আর্থিক সহায়তার একটি চিঠি ও নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহীদ স্মারক বুকে আঁকড়িয়ে শান্তনা দিয়ে আসছি।

নাচোল পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের থানা পাড়ার শহীদ এমরান আলীর স্ত্রী মোসা. গিনি বেগম বলেন, স্বামী বেঁচে নেই তবে ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত ২হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চিঠি ছাড়া আর কোন সহায়তা পায়নি, তবে নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শহীদ এমরান আলী স্ত্রী হিসেবে আমাকে একটি সম্মমনা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়েছে।

এমরান আলীর ছেলে নাচোল পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আহসান হাবিব জানান, শহীদ পিতার সন্তান হিসেবে নিজেকে গর্ব বোধ করি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের পরিবারের কোন রকম সহায়তা বা খোঁজ খবর নেয়নি।

নাচোল পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের কাদিকোলা গ্রামের শহীদ নূর-মোহাম্মদ লুটুর স্ত্রী সাদেনুর বেগম তাঁর স্বামীর নাম শুনতেই যেন, অতীতের স্মৃতিমনে পড়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি দুঃখের সাথে জানান, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত আর্থিক সহায়তার চিঠি ছাড়া তাঁর নিকট স্বামীর আর কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই।

নাচোল পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মোমিন পাড়ার ফাইজুদ্দিনের ছেলে শহীদ আমিনুল ইসলাম ছাত্র অবস্থায় পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন, তার বড় ভাই হেলাল উদ্দিন তাবলীগ জানান, শহীদ ছোট ভাইএর স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছি।

তিনি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, হয়ত রাস্ট্রও একদিন ভুলে যাবে এসব শহীদদের কথা আমার ভাই এর মত এসব শহীদ পরিবারও স্মৃতি থেকে মুছে যাবে, কিন্তু যাদের বুকের রক্তে এদেশ স্বাধীন হলো, দেশ পেল একটি লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু আমরা আমার ভাইয়ের শহীদি স্বীকৃতিটুকু পেলামনা আজো!

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মতিউর রহমান জানান, বিষয়টি আমি অনেকদিন পর জেনে ছিলাম এবং ওই শহীদদের স্বীকৃতির জন্য আবেদনও করা হয়েছিলো। কিন্তু কী কারণে যে তাঁরা সরকারী ভাবে স্বীকৃতি পাননি,তা আমার জানা নেই। তবে সময় এসেছে ওইসব শহীদদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়ার। নইলে আমাদের প্রজন্ম মারা গেলে আমরাও ওই শহীদদের নিকট চিরোঋণী হয়ে থাকবো।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) কমান্ডার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা জনান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, তবে রাস্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি না পেলে আমারতো কিছুই করার নেই।

স/অ

আরো পড়ুন …

করোনা: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৪ জনের মধ্যে সুস্থ ১৪