মঙ্গলবার , ১ মার্চ ২০২২ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলন

Paris
মার্চ ১, ২০২২ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

আজ বাঙালির প্রতিরোধের মাস মার্চের শুরু। উত্তাল ঘটনাবহুল এই মাসেই বাংলাদেশের ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণের সূচনা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়ে যায়।

৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক হঠকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সর্বস্তরের জনতা।

অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ২৫ মার্চ পর্যন্ত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে।

১৯৭০ সালের গণপরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এই রায় নস্যাৎ করতে নানা কূটচাল শুরু হয়।

১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছিল, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে ৩ মার্চ। কিন্তু ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিক এক বেতার ভাষণে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।

ইয়াহিয়া খান বলেন, পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি এবং অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বেতারে ওই ঘোষণা প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকা প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠানরত ক্রিকেট ম্যাচ ভণ্ডুল হয়ে যায়। দর্শক স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে শরিক হয়।

মিছিলগুলো আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়ার জন্য মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

অধিবেশন স্থগিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইএ-র মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান।

পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক শেষে হোটেল পূর্বাণীতে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকা শহরে এবং ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন। পল্টনে সমাবেশ করেন ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—ডাকসুর নেতারা।

ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। সন্ধ্যায় মোজাফফর—ন্যাপ মিছিল ও পথসভা করে প্রতিবাদ জানায়। রাতে মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ফার্মগেটে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ১৪ বছরের কিশোর আমানুল্লাহ, ২৮ বছরের তাজুল হকসহ তিনজন প্রাণ হারায়।

রাতে বঙ্গবন্ধু তাঁর ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাসভবনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আলোচনার জন্য বৈঠকে মিলিত হন। সন্ধ্যার পর তিনি সন্তোষে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি পাঠান।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক আইন পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা এম ইয়াকুব খান ১ মার্চ গভীর রাতে ১১০ নম্বর সামরিক আইন আদেশ জারি করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সংহতি বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী খবর, মতামত বা চিত্র প্রকাশের ব্যাপারে সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আইন ভঙ্গ করলে ২৫ নম্বর সামরিক আইনবিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর স্মৃতিকথা ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে লিখেছেন : ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বেলা একটার সময় রেডিওতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে শহরের সব জায়গায় হৈচৈ পড়ে গেছে। লোকেরা দলে দলে অফিস-আদালত ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেছে। …তক্ষুনি আবার বেরোলাম। এলিফ্যান্ট রোডে উঠতেই দেখি—দুই পাশের ছোট ছোট দোকানগুলোতে লোকজনের অস্বাভাবিক ভিড়। সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে কেনাকাটা করছে। ’

জাহানারা ইমাম লেখেন…‘জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিতের কী পরিণাম হতে পারে, তা নিয়ে বহু রাত পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা চলল খাবার টেবিলে বসে। রাত প্রায় বারোটার দিকে শুতে গিয়েও ঘুম এলো না। অনেক দূর থেকে স্লোগানের শব্দ আসছে। …কেবল জয় বাংলা ছাড়া অন্য স্নোগানের কথা ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু তবু এ সম্মিলিত শতকণ্ঠের গর্জন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে এসে পড়েছে শ্রুতির কিনারে। শিরশির করে উঠছে সারা শরীর। গভীর রাতে আধো-ঘুমে, আধো-জাগরণে মনে হলো যেন গুলির শব্দও শুনলাম। ’

সেই অগ্নিঝরা মার্চকে স্মরণ করতে গতকাল সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনে আজ বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে জাসদ। দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে এ সভায় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুসহ জাতীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়