স্বপ্নের ঘরে প্রথম ঈদ করলেন তারা

পরনে ভালো কোনো কাপড় না থাকলেও যা আছে তা গায়ে জড়িয়ে আদায় করলেন ঈদের নামাজ। জীবনের শেষ সম্বলটুকু চলে গেছে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙ্গনে। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন কৃষ্ণেরচর স্কুলের বারান্দায়।

সেখানেই ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনো রকম দিন কেটেছে তাদের। কৃষ্ণেরচড় এলাকায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে পাওয়া স্বপ্নের নিজের ঘরে জীবনে প্রথম ঈদ করলেন তারা। এ যেন এক অন্য রকম আনন্দ।

আজ বুধবার ঈদের দিন কৃষ্ণেরচর আবাসন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার- গৃহ হবে সবার’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের অর্থে দুর্গাপুর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য ৮০টি পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি করে সেমিপাকা ঘর উপহার দেয়া হয়। গৃহহীনরা এই ঘর পেয়ে প্রথম বারের মতো ঈদ করতে পেরে ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে।

ঘর পাওয়া জোবেদা বেগম (৬২) বলেন, সোমেশ্বরী নদী আমার ঘর লইয়া গ্যাছে, মাইনসের বাড়ি বাড়ি ছাপড়া তুইল্যাও ঘুমাইছি। শেষ মেশ কৃষ্ণেরচর ইসকুলের বারিন্দাত রইছি। পরে উপজিলাত আবেদন করছি ঘরের লাগিন। জীবনে কোনদিন ইটের দলান ঘরে থাকবাম, নিজের দলান ঘর অইবো এইডা ভাবজিনা। নয়া ঘরে ঈদ করতাছি, কি যে ভালা লাগতাছে গো বাজান। হেদিন এমপি সাইব ঘর গুলার খুঁজ নিয়া আমরারে ঈদে গুস্তু খাওনের ট্যাহা দিছইন, টেউনু সাইব আইয়্যা ঈদের বাজার দিছইন, আমরার আর কিতা লাগে? আমরার মাতার তাজ অইয়্যা থাকবাইন শেখ হাসিনা।

আকবর হোসেন (৫১) পেশায় দিনমজুর, পায়ের অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো চলতেও পারেন না। গত ৫ বছর আগে দুর্ঘটনায় তার পায়ের সমস্যা হয়েছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যের ভিটায় আশ্রিত। জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছেন অন্যের ভিটায়। অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য ছিল না তার।

তিনি বলেন, আগে ঝড় আসলে ভয় নাগছিল। বর্ষায় টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে সারা শরীর ভিজে যেতো। এখন আর আমার কোনো ভয় নাই। সরকার আমারে পাকা ঘর দিয়ে আমার মতো গরিব মানুষের মেলা উপকার করছে। আজ এই ঘরে সবাইকে নিয়ে ঈদ করতে পেরে আমরা খুব খুশি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই ধাপে এ উপজেলায় ৮০টি পরিবারকে খাস জমি ওপর একটি করে ঘর দেয়া হয়েছে। আরও ৫০টি ঘরের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমি মনে করি, ঘর গুলো পেয়ে এ জনগোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদাসহ জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি জায়গা নির্বাচন করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য একটি করে ঘর তৈরি করে দিতে পেরেছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করছি এসব ঘর পেয়ে সুবিধাভোগীরা অনেক উপকৃত হবেন। দুর্গাপুর উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

 

সুত্রঃ যুগান্তর