স্ত্রী শাঁখা-সিঁদুর না পরায় স্বামীকে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিলেন আসামের আদালত

ভারতের একটি আদালতের রায়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। একটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলার শুনানিতে বিচারপতি এক নারীর উদ্দেশে বলেন, শাঁখা-সিঁদুর পরেন না, মানে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানই মানেন না! এ কারণে ওই নারীর স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করেন আসামের গুয়াহাটির হাইকোর্ট।

ভারতের নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই দম্পতি ২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ওই নারী থাকতে না চাইলে দুজনের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। ফলস্বরূপ পরের বছর ৩০ জুন থেকে দুজন আলাদা থাকছেন।

ওই নারী তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের অভিযোগ এনে পুলিশে একটি অভিযোগ করেছিলেন। তবে সেই অভিযোগ আদালতে টেকেনি।

এর পর সেই মামলা যায় গুয়াহাটি হাইকোর্টে। সেখানে স্বামী অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী শাঁখা-সিঁদুর পরতে চান না। এ দাবি অস্বীকার করেননি স্ত্রীও।

১৯ জুন আসামের আদালত আদেশে বলেন, স্বামী অথবা স্বামীর পরিবারের সদস্যদের অসমর্থিত অভিযোগের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার ঘটনাটি সুপ্রিমকোর্টের অবমাননার সমান।

বিচারকরা বলেছেন, এই নারী তার বয়স্ক শাশুড়ির প্রতি তার স্বামীর দায়িত্ব এবং বাবা-মায়ের ভরণপোষণ ও বর্ষীয়ান নাগরিক আইন, ২০০৭-এর বিধান অনুসারে তার স্বামীকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজের আইনি দায়িত্ব পালন করতে বাধা দিয়েছেন; অথচ এ বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করেছেন পারিবারিক আদালত। এই জাতীয় প্রমাণ নিষ্ঠুর কাজ হিসাবে গণ্য করার পক্ষে যথেষ্ট।

এর আগে স্বামীর দায়ের করা বৈবাহিক আপিল বিষয়ে শুনানির পর নিম্নআদালতের প্রধান বিচারপতি অজয় লাম্বা ও বিচারপতি সৌমিত্র সাইকিয়া সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ পারিবারিক আদালতের একটি আদেশ স্থগিত করেন। ওই আদেশে স্ত্রীর পক্ষ স্বামীর প্রতি কোনো নিষ্ঠুর ব্যবহার পাওয়া যায়নি– এ কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ওই স্বামীর প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ওই ব্যক্তি পারিবারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন।

১৯ জুন গুয়াহাটির উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে– ‘…শাঁখা ও সিন্দুর পরতে স্বীকার না করলে ওই নারীকে অবিবাহিত মনে হবে এবং অথবা আপিলকারীর (স্বামী) সঙ্গে তিনি এই বিয়ে টিকিয়ে রাখতেও অস্বীকার করছেন বলেই ইঙ্গিত দেন। স্ত্রীর এ ধরনের আচরণ তার স্পষ্ট অভিপ্রায়কেই নির্দেশ করে যে তিনি আপিলকারীর সঙ্গে তার বিবাহিত জীবন চালিয়ে যেতে রাজি নন,।
যদিও আদালতের এই মন্তব্যের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন– শাঁখা-সিঁদুর কে পরবেন আর কে পরবেন না, সেটি একজন মানুষের ব্যক্তিগত অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় বইছে।

 

সুত্রঃ যুগান্তর