স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

বর্তমানে পৃথিবীঁজুড়েই স্তন ক্যান্সার সমস্যা বাড়ছে। দেশেও এর প্রকোপ আমরা দেখছি। প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রতি ৩৬ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এই ক্যান্সার ৯৮ শতাংশ নিরাময়যোগ্য। তাই ক্যান্সারের বিষয়টি ভয় না পেয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, ২০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক মহিলা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট দিনে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবে। যেন যে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা যেমন স্তনে বা বগলে চাকা বা পিণ্ড, চামড়ার রং এবং গঠন বদলে যাওয়া, স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বোঁটা থেকে রক্ত বা তরল জাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হচ্ছে কি-না তা লক্ষ্য করবে। এই লক্ষণগুলোর ব্যাপারে যদি মহিলারা অবগত থাকেন এবং প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন, তাহলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে রোগী কার কাছে যাবেন এবং তার চিকিৎসা পদ্ধতি কী রকম হতে পারে, তা জেনে রাখা। প্রথমে ক্যান্সার নিশ্চিত করার জন্য সার্জন বা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া সর্বোত্তম। সেখানে তিনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ‘কোর বায়োপসি’ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন।

এবার আসি চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে আলোচনায়। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, সার্জারি, হরমোন থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি- এই পন্থাগুলো অবলম্বন করা হয়ে থাকে। ক্যান্সারের স্টেজ অনুযায়ী কখনও প্রথমে সার্জারি করে পরে কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের কেমোথেরাপির ওষুধ তৈরি হচ্ছে, যার গুণগত মান আশাব্যঞ্জক। জেলা পর্যায়েও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা কেমোথেরাপি দিচ্ছেন। রেডিয়েশন থেরাপির প্রতুলতা অনুযায়ী সরকারি পর্যায়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশন যেমন টুডি, থ্রিডি, থ্রিডিআরটি, আইএমআরটি, ভিএমএটি, ব্রাকিথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হরমোন থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপির ওষুধ ও বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে, যা বেশ কার্যকরী।

একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন এবং চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থাশীল হওয়ার কথা বলবো। স্তন ক্যান্সার সচেতনতার এই মাসে আসুন, নিজে সচেতন হই; অন্যকেও সচেতন করি।

সূত্র: সমকাল