সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর দেশের ভেতরে ভারি বর্ষণের কারণে গত সপ্তাহ থেকে কুড়িগ্রাম ও ঝিনাইদহে চতুর্থ দফায় বন্যা চলছে। কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে উঠছে। এর ফলে আগামীকাল সোমবার থেকে সারা দেশে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। দেশের কোথাও হালকা থেকে মাঝারি, আবার কোথাও ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারতেও বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ফলে নদ-নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। এতে করে ফের অস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে বন্যা হওয়ার শঙ্কা ক্ষীণ।

আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, দেশে এখন বর্ষাকাল চলছে। তবে আগামীকাল বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ হতে পারে। তা ছাড়া বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে  আগামীকাল সোমবার থেকে সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে। এই বৃষ্টি শুক্রবার পর্যন্ত হতে পারে। তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, বরগুনার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হতে পারে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, তাদের পর্যবেক্ষণে থাকা ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৫৩টি স্টেশনের। কমেছে ৪৭টি, আর অপরিবর্তিত রয়েছে একটি স্টেশনের। সারা দেশে এখন বিপৎসীমার ওপরে ওঠা নদীর সংখ্যা তিনটি। কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। তথ্য বলছে, ২৭ জুন থেকে দেশে বন্যা শুরু হয়। তিন দফা শেষে গত সপ্তাহে চতুর্থবারের মতো কুড়িগ্রাম ও ঝিনাইদহে বন্যা দেখা দেয়।

এদিকে আবহওয়া অফিসের তথ্য মতে, ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মৃদ্যু তাপপ্রবাহ চলছে। যেটি আজও অব্যাহত থাকতে পারে। ময়মনসিংহে গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নেত্রকোনায় ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বগুড়া, বরিশাল, মোংলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা ছিল। সাধারণত ৩৬ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা উঠলে তখন মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়।

এদিকে কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের সব কয়টি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ধরলার পানি এখনো বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। পানি কমছে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তার। কুড়িগ্রাম সদরসহ ৯ উপজেলার শতাধিক চরের নিচু এলাকা এখনো প্লাবিত রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভাঙন। ধরলার ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নন্দদুলালের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হওয়ায় টিনশেড স্কুলঘরটি সরিয়ে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, পদ্মার পানি ও স্রোতের গতি বাড়ছে। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়েছে। সেখানে ডুবে গেছে বহু কৃষকের ফসলি জমি।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে গতকাল তা বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। চতুর্থ দফায় যমুনায় পানি বেড়ে জেলার নদী-তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের অনেক বাড়িঘরে ঢুকতে শুরু করেছে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ও পাথর্শী ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ