সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন রুট আড়াই বছর বন্ধ, ভোগান্তিতে রাজশাহীর মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনার প্রকোপ কমে গেছে। ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রে সবধরনের ভিসা চালু হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে দুই দেশের বেশ কয়েকটি ইমিগ্রেশন রুট। কিন্তু এখনো বন্ধ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন রুট।

গুরুত্বপূর্ণ এই রুট বন্ধ থাকায় রাজশাহী অঞ্চলের বাসিন্দাদের বহুপথ ঘুরে বিমানে অথবা বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই অঞ্চলের ভারতগামী যাত্রীদের।

রাজশাহী অঞ্চলের ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন, সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন রুট দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি চলমান থাকলেও পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে।

সোনা মসজিদ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ করে দেয় সরকার। করোনা

তবে এতে শুধুমাত্র ভারত থেকে পাসপোর্ট যাত্রীরা এই চেকপোস্ট ব্যবহার করে দেশে আসতে পারছেন। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে সমস্যার কারণে এই রুট ব্যবহার করে ভারতে যেতে পারছেন না বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন যাত্রী যেতে কোনো বাধা না দিলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশন নিতে চায় না বলে জানা গেছে।

সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক মোজাম্মেল হক বলেন, সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধের কারণে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। আগে ভারতে গিয়ে মালামাল দেখে আমদানি করতাম। কিন্তু এখন আর তা হয় না। ভারতের ব্যবসায়ীরা পণ্য দেখায় একটা, আর পাঠায় আরেকটা। এতে করে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে লোকশান।

সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন রুটের যাত্রীরা বলছেন, সকালে রাজশাহী থেকে বের হয়ে দুপুরের আগেই ভারতের মালদহ শহরে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে ভারতের যে কোনো জায়গায় যাওয়া সহজ। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মালদা স্টেশন, ভারতের যে কোনো শহরের সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যুক্ত। যোগাযোগ সুবিধার কারণে সোনামসজিদ-মহদিপুর পথে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর যাত্রীরা সহজেই ভারতে আসা-যাওয়া করতেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, ১১ জুলাই চিকিৎসার জন্য বেনাপোল হয়ে ভারতে যেতে চরম দুর্ভোগে পড়েন তিনি। ১৭ জুলাই ফেরার পথেও একই ভোগান্তি হয়। বেনাপোলে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় রাত তিনটা, সাড়ে তিনটায় গিয়ে ইমিগ্রেশনে লাইনে দাঁড়াতে হয়। ইমিগ্রেশন পার হতেই তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগে যায়।

গত ২২ জুন বেনাপোল হয়ে ভারতে গিয়ে আকাশ পথে দেশে ফিরেছেন আমীর আলী। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে ১৩ দিন ভারতের চেন্নাইতে ছিলেন তিনি। আমীর আলী বলেন, চিকিৎসার কাজে ঢাকা থেকে কাছে ও সুবিধাজনক সোনা মসজিদ-মহদীপুর ইমিগ্রেশন পথ। করোনা পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার পরও কেন সোনা মসজিদ স্থলবন্দর চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশি যাত্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবু সালেহ। তিনি জানান, কিছু দিন আগে চিকিৎসার জন্য আকাশপথে ভারতে গিয়েছিলাম। সোনা মসজিদ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চালু থাকলে কম খরচ ও অল্প সময়ে ভারতে যাওয়া যায়। কারণ এই পথে ওপারে গেলেই মালদা। এরপরে ট্রেনে খুব দ্রুত ও কম খরচে কলকাতা ও চেন্নাই যাওয়া যায়। কিন্তু এখন সোনা মসজিদ দিয়ে ভারতে প্রবেশের সুযোগ নেই।

রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আবদুল বাতেন বলেন, সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন চালু করতে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো সোনা মসজিদ-মহদিপুর ইমিগ্রেশন চালু করেনি। ফলে লোকজনকে কষ্ট করে বেনাপোল দিয়েই যেতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করারও নেই।

রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলে একজন ভিসা কর্মকর্তা বলেন, সোনা মসজিদ ইমিগ্রেশন রুট ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে বন্ধ আছে। নির্দেশ আসলে আমরা সব পথেই আগের মতো ভারত গমনের ভিসা ইস্যু করতে পারি। আসলে এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। আমরাও চাই মানুষ সহজ পথে আসা-যাওয়া করুক।

জি/আর