সোনাবিলে স্লুইসগেট বন্ধ করে মাছচাষ, জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার একর জমি

বাগমারা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাগমারা থানা সংলগ্ন সোনাবিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম স্লুইসগেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে অবৈধভাবে মাছচাষ শুরু করেছেন এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল। এতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ওই বিলের কয়েক হাজার একর জমির আউশধান, পানবরজ ও পটলসহ বিভিন্ন ফসলচাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ওই বিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া কুঁচামারা দাঁড়ার লীজ বাতিল করে বিলটি উন্মক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি আবেদন করা হয়েছে। ওই আবেদনপত্রে বাগমারা গ্রামের কার্ডধারী মৎস্যজীবি মাহাবুর রহমানসহ গরিপুর ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের চার শতাধিক কৃষক ও মৎস্যজীবির স্বাক্ষর রয়েছে। আবেদনের অনুলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরেও দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার গনিপুর ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের সোনাবিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝিগ্রাম থেকে বাগমারা থানা সংলগ্ন স্লুইসগেট হয়ে রানী নদীর সঙ্গে সংযোগপূর্ণ কুঁচামারা দাঁড়াটি আজীবন ধরে করমুক্ত ও উন্মক্ত ছিলো। ওই বিলে তথা কুঁচামারা দাঁড়ার উন্মক্ত জলাশয়ে এলাকার দরিদ্র মৎস্যজীবীরা আজীবন ধরে স্বাধীনভাবে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করতেন। তাছাড়া ওই বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া কুঁচামারা দাঁড়ার মুখে থানা সংলগ্ন স্লুইসগেট দিয়ে কৃষকেরা সুবিধা মতো বিলে প্রয়োনীয় পানি প্রবেশ করে নিয়ে আবার কখনো অতিরিক্ত পানি বের করে দিয়ে ফসলচাষ করে আসছিলেন।

সম্প্রতি এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল দাঁড়াটি লীজ নিয়ে বিল সংলগ্ন এলাকার মৎস্যজীবিদের উচ্ছেদ করে দিয়ে এখন পুরো বিলটিই দখল করে নিয়েছেন। প্রভাবশালী ওই মহল ক্ষমতার দাপটে বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম স্লুইসগেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে অবৈধভাবে মাছচাষ শুরু করেছেন। এতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ওই বিলের প্রায় ১০ হাজার একর জমির আউশধান, পানবরজ ও পটলসহ বিভিন্ন ফসল এখন হুমকির মুখে পড়েছে। দুই/এক দিনের মধ্যেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে ওই বিলের চাষকৃত সমস্ত ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে। তাছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে মওসুমী ফসল বিশেষ করে আলু, পটল, বেগুন, করলা, বরবটি, ঢেড়শ, পিয়াজ, মরিজ, পেঁপে, ঝিংগা ও শসাসহ সবজি জাতীয় অন্যান্ন ফসলের চাষও ব্যাহত হবে।

সরজমিনে এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুঁচামারা দাঁড়া সংলগ্ন সোনাবিলের চারদিকে বাগমারা, একডালা, মাঝিগ্রাম, পোড়াকয়া, মোহাম্মদপুর, বালানগর, শ্যামপুর ও গোপালপুরসহ প্রায় ১০/১২ টি গ্রামে কয়েক হাজার কৃষক পরিবার রয়েছেন। ওইসব কৃষকেরা তাদের জমিতে বর্তমানে আউশধান, পটল ও পানচাষ করেছেন। কিন্তু এ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম স্লুইসগেটটি বন্ধ করে দেওয়ায় বিলের অতিরিক্ত পানি বের হতে পারছেনা। ফলে একটু বৃষ্টিতেই বিলে ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন ।

বাগমারা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নানের এক বিঘা, দুলাল হোসেনের দেড় বিঘা ও সুজনের দুই বিঘা জমির পানবরজ কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে বলে তারা জানান। এ অবস্থায় কেউ দূর থেকে মাটি সংগ্রহ করে পানবরজের চারদিকে বাঁধ দিয়ে, আবার কেউ শ্যালো মেশিন দ্বারা পানবরজ থেকে পানি বের করে দিয়ে জলাবদ্ধতার কবল থেকে পানবরজ রক্ষার চেষ্টা করছেন। এদিকে বাগমারা গ্রামের কার্ডধারী মৎস্যজীবি মাহাবুর রহমান, বালানগর গ্রামের মৎস্যজীবি আক্কাছ আলী ও আশরাফুল ইসলাম বলেন- সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা ওই বিলের পানিতে স্বাধীনভাবে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। কিন্তু প্রভাবশালীরা বিলটি দখলে নেয়ার পর থেকেই তারা আর ওই বিলে মাছ ধরতে পারছেন না। করোনার কারণে তারা দূরে কোনো কাজেও যেতে পারছেন না। এই অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর দিন কাটছে বলে মনের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে এক পর্যায়ে তারা কেঁদে ফেলেন।

ওইসব গরিব ও অসহায় মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর কথা বিবেচনা করে এবং বিলের প্রায় ১০ হাজার একর জমির ফসল উৎপাদনের কথা বিবেচনা করে অতিসত্তর কুঁচামারা দাঁড়াটির লীজ বাতিল করে স্লুইসগেটটি খুলে দেয়া এবং প্রভাশালীদের দখল থেকে বিলটি সবার জন্য উন্মক্ত করে দেয়া প্রয়োজন বলে বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবিরা দাবি জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, পানি চলাচল বন্ধ করে কেউ মাছ চাষ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারী নির্দেশনাও রয়েছে। তারপরও কেউ ব্রিজ, কালভাট ও স্লুইচ গেটের মুখ বন্ধ করে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানাসহ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবিদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

স/রি