নিজস্ব প্রতিবেদক:
রহিমা বেগম। বয়স ৫০ এর ঘরে। তিনি নিতে এসেছেন করোনাভাইরাসের টিকা। তার সাথে এসেছেন রেনেছা বেগম (৪৮)। তিনি টিকা নিয়েছেন- তবে এসেছেন চোখের চিকিৎসার জন্য। তারা বলছেন-‘রাজশাহী মেডিকেলে অনেক রোগি যায়। এই বয়সে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নেওয়া কষ্ট কর। আবার সেই তুলনায় সময় ও ব্যয় দুই বেশি।’
সরেজমিনে সোমবার (১৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, ভেতরে বাইরে অনেক রোগি। কেউ এসেছেন- করোনার ভ্যাকসিনের টিকা নিতে, কেউ এসেছে চক্ষু, দাঁতসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হলেও এখানে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগির চাপ সামলাতে হয় চিকিৎসকদের বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে- সর্বশেষ রোববার (১৪ মার্চ) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৭২৬ জন রোগি। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ১৭৮ জন। তিনটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩৩৭জন ছাড়াও ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ২১১ জন রোগি। এদের মধ্যে গ্রামের দরিদ্র মানুষই বেশি। এই সমস্ত রোগিকে যেতে হতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে, নতুবা ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
গ্রামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও করোনাকালীন বিভিন্ন সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে। যার অংশ হিসেবে করোনায় আক্রান্তে সংখ্যা অনেক কম বলে তারা দাবি করেন। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সীমিত জনবল নিয়ে সবধরনের সেবা নিশ্চিত করছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ঘরের কাছে মনের মতো সেবা দানের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নতমানের সেবা পায় রোগিরা। জেলা শহরের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না রোগিদের। ফলে দিন দিন চাপ বাড়তে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গ্রাম এলাকা হওয়ায় সাপের কামড়ের রোগি আসে তাদের তাছে। সেই জায়গা থেকে এন্টিভেনাম পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে বলে জানান তারা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির দুটির মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। আর ১৪ বছর ধরে নষ্ট অবস্থায় থাকা এক্সরে মেশিন বাদ দিয়ে বসছে নতুন মেশিন। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে একটি ডেন্টাল ছাড়াও দুইটি নরমাল মেশিনে সব ধরনের এক্সরে করা সম্ভব হবে। ফলে রোগিদের আর শহরে ছুটতে হবে না এক্সরের জন্য।
জানা গেছে- পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিমাসে মাসে ১০ থেকে ১২টি নরমাল ডেলিভেরি হয়। আগামিতে আরও বাড়বে। আর পহেলা এপ্রিল থেকে চালু হবে সিজারিয়ান। এছাড়া গর্ভবতি মায়েদের ফি ৫টি চেকআপ ছাড়াও ভায়া সেন্টার রয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
অন্যদিকে, চক্ষু রোগিদের জন্য গত ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যেমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের উদ্বোধন করেছেন। এর পরপরেই চক্ষু সেবা নিতে আসতে শুরু করেন রোগিরা। এখানে বিনামূল্যে চশমা, ড্রপ ও ওষুধ পাওয়ায় খুশি তারা।
অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, রোগির রোগ শনাক্তে রক্তের পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরনের রক্তের পরীক্ষা সম্ভব। এতে করে রোগিদের সদর হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেতে হবে না।
চিকিৎসকরা বলছেন- করোনাকালীন তারা সাপ্তাহিক ছুটিও কাটাতে পারেন নি। ছুটির দিনেও তাদের অফিসে মিটিং, বাসায় থাকলে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে মিটিং করতে হয়েছে তাদের। এমন ব্যস্ততাই এসেছে সফলতা। তাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার কম। এছাড়া রোববার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ১ হাজার ২৪৬ জন। এছাড়া ভ্যাকসিনের আওতায় আসার লক্ষে ১ হাজারের বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে করোনা ভ্যাকসিন।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জরুরি বিভাগের তুলনায় বেশি রোগির চাপ সামলাতে হয় বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের। রোববার (১৪ মার্চ) এর তথ্যে বলছে- বহির্বিভাগে ২ হাজার ১৩৬ জন রোগিকে সেবা দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে শুধু জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছেন ৪২ জন রোগি।
রফিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান- এখান থেকে সদর হাসপাতাল বেশি দূরে না। দারুশা গ্রাম এলাকা। সম্প্রতি করোনাকালীন স্বাস্থ্য সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তারা বাড়ি বাড়ি ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে আক্রান্তদের। অগের তুলনায় এখানে ভালো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন রোগিরা। তাই প্রতিদিন এতো ভিড়।
তিনি বলেন- চিকিৎসাসেবার বাতিঘর বলা চলে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি মাত্র এক বছরে বেশ পরিপাটি হয়েছে। ভেতরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ছাড়া বসার দুইটা বড়-বড় ছাতা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে রোগিরা বিশ্রাম নিতে পারবেন। সবমিলে ঘরের কাছে মনের মতো সেবা পাচ্ছেন পবার মানুষ।
পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাবেয়া বসরী জানান, এখন আর জেলা শহরের হাসপাতালে যেত হয় না উপজেলার মানুষদের। যদিও সীমিত জনবল। তা নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে উন্নতমানের সেবা দেওয়া হয়। গত এক বছরের তুলনায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে- সেই লক্ষ্যে স্থানীয় সাংসদ আয়েন উদ্দিনের ব্যাপক অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ডেন্টাল ও জেনারেল এক্সরে মেশিন চালু হবে দ্রুত। এছাড়া বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করতে আবেদন করা হয়েছে। এখানে অ্যান্টিবায়েটিকসহ ৫০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া রোগি কল্যাণ তহবিলের উদ্বোধন করা হবে।
স/আ