সেই প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে থানায় জিডি, কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বরিশালে আসা যুবক প্রেমকান্তের (৩৬) বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীর পরিবার এ ব্যাপারে আইনি সহযোগিতা চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে।

কলেজছাত্রী ও তার পরিবারের অভিযোগ, প্রেমকান্ত নামের ওই যুবক তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বদনাম ছড়িয়েছেন। সামাজিকভাবে হেয় করেছেন।

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের এই ছাত্রীর বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায়।

তবে প্রেমকান্তের দাবি, ফেসবুকে তিন বছর আগে পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তি‌নি এক‌টিবার ওই কলেজছাত্রীর মুখোমু‌খি হতে চান। সে কারণে শুক্রবার থেকে প্রেমকান্ত সাগরতীরের বরগুনার তালতলী উপজেলায় অবস্থান করছেন।

তালতলী থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মেয়েটির বাবা শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়ের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তবে প্রেমকান্ত যদি এখানে কোনো ঝামেলা করেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওসি জানান।

জিডির বরাত দিয়ে ওসি বলেন, মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে প্রেমকান্ত অশালীন প্রস্তাব দিয়ে ঢাকা নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। মেয়ে সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রেমকান্ত তালতলী চলে যান। ওই যুবক তার মেয়ের যেকোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। তিনি তার মেয়ের নিরাপত্তা চান।

ওসি আরো বলেন, ‘প্রেমকান্ত তালতলী এসেছিল, সন্ধ্যায় আবার বরগুনা ফিরে গেছে বলে জেনেছি। যেহেতু চলে গেছে এবং এখানে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, তাই এ ব্যাপারে এখন করার কিছু নেই। ‘

প্রেমকান্ত সামাজিকভাবে হেয় করছে, দাবি কলেজছাত্রীর
প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত ও সামাজিকভাবে হেয় করার অভিযোগ করেছেন সরকারি বরিশাল মহিলা কলেজের ছাত্রী ও তার বাবা। তাদের দাবি, পুলিশ তামিলনাড়ু থেকে আসা যুবকের দায়িত্ব নেওয়ায় কোনো অভিযোগ দেননি। ছাত্রীর দাবি, প্রেমকান্ত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় বদনাম ছড়িয়েছেন। তার শাস্তি হওয়া উচিত।

শুক্রবার ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, ফেসবুকে তো কত মানুষের সাথে কথা হয়। তামিলনাড়ুর প্রেমকান্তের সাথেও তার কথা হয়। একপর্যায়ে তিনি বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন তার প্রস্তাব সে ডিনাই করে। তখন তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসে একবার সামনাসামনি দেখে চলে যাবেন।

ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি বাড়ি চলে এসেছি। এরপর সে বলে আমি এসেছি। সে কলেজে গিয়ে ঝামেলা করেছে। আমার ফ্রেন্ডদের সাথে ঝামেলা করেছে। আর এখন বদনাম করছে। এখন নাকি আমি লোক দিয়ে তাকে মারধর করেছি। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ‘

কলেজছাত্রী বলেন, প্রেমকান্ত মিডিয়ার কাছে এসব কথা বলার পর পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করেছে, মেয়েটি এ রকম করেছে কি না? তাহলে তাকে অভিযোগ দিতে বলেছিল পুলিশ। কিন্তু প্রেমকান্ত জানিয়েছেন তার কোনো অভিযোগ নেই। ছাত্রী জানান, এরপর পুলিশ তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়।

ছাত্রীর দাবি, ওই সময় তিনি অভিযোগ দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করে, প্রেমকান্তকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। পুলিশ কথা দিয়েছিল এ নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হলে তারা দেখবেন। এ কারণে প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তা না হলে ওই দিন তার বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা নিতেন বলে জানান ছাত্রী।

তার অভিযোগ, প্রেমকান্তের কারণে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন। তাই প্রেমকান্তের শাস্তি পাওয়া উচিত।

ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘ওই ছেলেটির সাথে মেয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়। এরপর ছেলেটি বরিশাল চলে আসে। ছেলেটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাকে ও আমার মেয়েকে এয়ারপোর্ট থানায় ডেকে নেয়। ওই সময় আমি আমার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থানায় যাই। সেখানে থানার ওসি আমার মেয়ের কাছ থেকে সকল ঘটনা শোনেন। মেয়ে যা আমার কাছে বলেনি, তা পুলিশের কাছে বলেছে। আমার মেয়ের সাথে ওই ছেলের কোনো সম্পর্ক ছিল না, এটা সত্য। এখন ওই ছেলেটি ভারত থেকে এসে যেভাবে আমাদেরকে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি করছে তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার চাই। ‘ একই সাথে তার মেয়ের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকটা দেখার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানান।

মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেশ চন্দ্র হালদার বলেন, ‘ওই তরুণী যৌন  হয়রানির শিকার হলে বরিশাল অথবা বরগুনার যেকোনো থানায় আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবে। আমি তো মনে করেছিলাম ঢাকার বাসে তুলে দিয়েছি, সে ভারতে চলে যাবে। সে ভারতে না গিয়ে বরিশালে অবস্থান করে ওই তরুণীকে কোনোভাবে ক্ষতি করলে তাকে অবশ্যই আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। ‘

বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে যোগাযোগের পর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অপেক্ষায় রেখেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি প্রেমকান্ত। তাকে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আনসার-ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে পাওয়া গেলেও কথা বলেননি। ভিডিও বক্তব্য দিতে অস্বীকার জানালেও তিনি জানিয়েছেন, পরিবার থেকে গণমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। এ ছাড়া তিনি তার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এর বাইরে কিছু বলতে চান না।

অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়েকে বাংলাদেশের আইন ভেঙে নিতে চাওয়ার ইচ্ছা অযৌক্তিক কি না―এমন প্রশ্ন করা হলে প্রেমকান্ত সেখান থেকে চলে যান।

নিজেকে প্রেমকান্ত পরিচয় দেওয়া ভারতীয় যুবক দাবি করেছেন, প্রেমের টানে তিনি বরিশালে এসেছেন। তিনি গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশে আসার পর প্রেমিকার নির্দেশনা অনুসারে বরিশালে আসেন। এসে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করেন। তবে তার প্রেমিকার আরেক প্রেমিক তাকে আটক করে মারধর করেন এবং টাকা নিয়ে যান। এরপর তিনি এয়ারপোর্ট থানায় বিষয়টি জানালে সেখানে তাকে আটকে রেখে পাঠিয়ে দেন। এখন তিনি তার প্রেমিকাকে না পেলেও শেষবারের মতো একবার দেখা করতে চান।

প্রেমকান্তের দাবি, তিনি নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। এ ছাড়া তিনি নাচে বেশ ভালো। নাচের সূত্র ধরেই বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় তার। ওই তরুণী বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

 

 

সুত্রঃ কালের কন্ঠ