সুরক্ষিত ক্যাম্পাসে অরক্ষিত হল

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একমাত্র ছাত্রাবাস শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ছাত্রহল থেকে কম্পিউটার চুরির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৪১৪ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আবির হাসান। ইতিপূর্বেও করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছোট-বড় মূল্যবান জিনিস চুরির ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবির হাসান জানান, আমি গতকাল আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি হল থেকে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস ও কম্পিউটার নিতে। কিন্তু কক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা লাগানো এবং জানালা দিয়ে দেখি পিছনের দরজা খোলা। পরে হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় কক্ষের পেছনের বেলকনি দিয়ে প্রবেশ করে দেখি পুরো কক্ষের জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় আছে এবং আমার কম্পিউটারটি নেই। কেউ একজন পিছনের দরজা খুলে চুরি করেছে এবং ভিতর থেকে সামনের দরজা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার পর কম্পিউটার চুরির লিখিত অভিযোগ দিই।

চুরির বিষয়ে তদন্ত করার লক্ষে ইতোমধ্যে সহকারী প্রভোস্ট ড. সুজন চৌধুরীকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রভোস্টের কার্যালয় থেকে প্রভোস্ট ড. নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল হলের সীমানা প্রাচীরের বিতর থেকে সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে আটক করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এই বিষয়ে হল প্রভোস্ট বলেন, গতকাল চুরির অভিযোগ আসার পরপরই আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও আমরা হলের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছি এবং পুরো হল সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনার জন্য আরো ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজনের জন্য আবেদন করেছি। চুরির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা হল বন্ধের আগেই নোটিশ দিয়েছিলাম সবার কক্ষ থেকে মূল্যবান সামগ্রীগুলো নিয়ে যেতে। এরপর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে হলের দরজা জানালার ক্ষতি হওয়ায় সকল আবাসিক শিক্ষার্থীকে বলা হয়েছে প্রভোস্ট অফিসে স্বীয় কক্ষের চাবি জমা দেওয়া ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এখনও তা করে নাই। এই চুরির ঘটনার জন্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের জন্য আমার সমবেদনা রইল। খুব দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি’না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। যেহেতু আমরা আগে থেকেই কয়েকবার নোটিশ দিয়েছি যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের মূলাবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এরপরও যদি তারা সেগুলো  না নিয়ে যায় এবং আমাদের অবহিত না করে কক্ষে কম্পিউটারের মত মূল্যবান জিনিস রেখে যায় সেই দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নয়। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেই বিষয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

হলে চুরির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আর প্রতিবেদন আসলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও হলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করার সাথে আমরা শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জিনিসপত্র তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছি, এরপরও কেউ যদি তার মূল্যবান জিনিসপত্র না নিয়ে যায় সে দায়ভার তাকেই নিতে হবে ।

গার্ডদের দায়িত্বে গাফিলতি থাকলে বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না বলে জানান তিনি। বলেন, আমাদের প্রশাসন যেটা পারবে তা হলো তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হেডকোয়ার্টারে দেওয়া, বাদ বাকি তাদের দায়িত্ব।

উল্লেখ্য, এর আগেও করোনাকালীন যবিপ্রবির ছাত্র হলে ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘঠেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা আর না ঘটে। এছাড়াও যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গেলে করতে গেলে বিভিন্ন নিয়মরীতি ও ফর্মালিটিস মেনে প্রবেশ করতে হয় এবং আবাসিক হলের নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত সেখানে এধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের নির্বিকারতা ও নিরাপত্তা প্রদানে অপারগতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, চলছে আলোচনা সমালোচনা সহ বিরূপ মন্তব্য । এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতি পূরণের দাবি করেছে  ভুক্তভুগি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ