মঙ্গলবার , ১৫ মার্চ ২০২২ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সুপেয় পানি সংকটে দুর্ভোগে ৬০ হাজার মানুষ

Paris
মার্চ ১৫, ২০২২ ৭:০৯ অপরাহ্ণ

বসানো যাচ্ছে না গভীর নলকূপ, তাই বাধ্য হয়েই বৃষ্টির পানি, পুকুর ও ডোবার পানি পান করছেন মানুষ। রান্না, থালাবাসন ধোয়া ও গোসলসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে হচ্ছে লোনা পানিতে। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা, চেঁচরিরামপুর ও আমুয়া ইউনিয়নের ৬০ হাজার মানুষ বছরের পর বছর ধরে সুপেয় পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এতে লেগেই আছে পানিবাহিত রোগব্যাধি।

জানা যায়, উপকূলীয় অঞ্চল কাঁঠালিয়া উপজেলার এই তিনটি ইউনিয়ন বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় নলকূপে পানি ওঠে লবণাক্ত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বরিশাল জোনাল ল্যাব একটি ইউনিয়নে পরীক্ষা চালিয়ে আড়াই হাজার থেকে ৩০০০ পিপিএম পর্যন্ত লবণাক্ততা শনাক্ত করে, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। ১০০০ থেকে ১৫০০ পিপিএম পর্যন্ত লবণাক্ত পানি মানব দেহে সহনশীল। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা বৃষ্টির মৌসুমে পানি ধরে রাখেন বড় ট্যাঙ্কিতে। সেই পানি শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় সুপেয় পানির অভাব।

দুর্গম এই এলাকার অল্প আয়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরেই পুকুর ও ডেবার পানিতে ফিটকিরি অথবা ওষুধ দিয়ে পরিস্কার করে পান করছেন। যাদের সামর্থ নেই, তারা নোনা পানি দিয়ে রান্না, থালাবাসন ধোয়া ও গোসলের কাজ সারছেন।

কাঁঠালিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সাইফুর রহমান জানান, তিনটি ইউনিয়নে অগভীর নলকূপ রয়েছে ৯৬টি, এর মধ্যে অকেজো রয়েছে ৮টি। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে পুকুর পাড়ে পানির ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন করা হয় ১৭২টি। এগুলোর প্রায় সবই অকেজো। পরে লবণাক্ত দূরীকরণ প্লান্ট স্থাপন করে ৪টি, তাও নষ্টের পথে।

এদিকে পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে আশার কথা, কাঁঠালিয়াবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহে সরকার পাইপ লাইন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটা শহর থেকে গ্রামেও পৌঁছানো হবে। তিনটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির স্থায়ী ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং এর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের নেয়ামতপুরা গ্রামের শিক্ষিকা নুসরাত জাহান বলেন, আমাদের ইউনিয়নে গভীর নলকূপ বসানো যাচ্ছে না, দুই-একটি বসানো গেলেও লোনা পানি ওঠে। আমরা বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা পান করি। এই পানি শেষ হয়ে গেলে পুকুর ও ডোবার পানি ফিটকিরি অথবা বিশুদ্ধকরণ ওষুধ দিয়ে ব্যবহার করি। অনেক সময় এসব পানি নষ্টও হয়ে যায়। যাদের সামর্থ নেই, তারা নোংরা পানিই ব্যবহার করে। ফলে পানিবাহিত রোগব্যাধি লেগেই থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশীদ মোল্লা বলেন, তিনবার ইউপি সদস্য ছিলাম। আমার বয়স এখন আশির কোটায়। সারাজীবনই বৃষ্টির পানি অথবা পুকুরের পানি পান করেছি, প্রতিবেশীদেরও এটা করতে দেখেছি। গোসল ও রান্নার কাজও করতে হচ্ছে এই পানি দিয়ে। সুপেয় পানির স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।

চেঁচরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, অনেক আগে আমাদের ইউনিয়নে গভীর নলকূপ বসানোর পরীক্ষা করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এখন যদি আবারো পরীক্ষা করা হয়, তাহলে সুপেয় পানি আসে কিনা দেখা যেত। সবাই আসলে এখনো বৃষ্টির পানি পান করছে, কেউ আবার পুকুর ও ডোবার পানির ওপরই নির্ভরশীল। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমরা সরকারের উচ্চমহলে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি, যাতে হাজার হাজার মানুষ সুপেয় পানি পায়।

পাটিখালঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান শিশির দাস বলেন, আমাদের ইউনিয়নে কোথায় গভীর নলকূপ বসানো যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পিএসএফ ও লবণাক্ত দূরীকরণ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই অকেজো। আমরা জনস্বাস্থ্য অধিদফতর ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেছি, সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য। লবণাক্ত দূরীকরণ প্লান্ট সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি, এটা প্রতি ওয়ার্ডে দুটি করে স্থাপন করা হলে জনগণের পানির সমস্যা দূর হবে। এছাড়াও যদি ভালো কোনো পদ্ধতি থাকে, তা করার দাবি জানাচ্ছি।

কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, কাঁঠালিয়ার তিনটি ইউনিয়নেই সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। মানুষ এখনো বৃষ্টির পানি ও পুকুরের পানি পান করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি প্রথমে কাঁঠালিয়া সদর ইউনিয়নে বসানো হবে। পর্যায়ক্রমে এখান থেকে পানি বিভিন্ন ইউনিয়নে সরবরাহ করা হবে। তবে এ পানি নিতে হলে গ্রাহকদের সামান্য বিল দিতে হবে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর

সর্বশেষ - জাতীয়