সিলেট-সুনামগঞ্জ পানির নিচে

 

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চার ঘণ্টার পাহাড়ি ঢলে গত বুধবার সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা তলিয়ে ছিল। এর সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত যোগ হয়ে গতকাল শুক্রবার সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সব এলাকা তলিয়ে গেল। পানি এখন বাড়িঘরের ছাদ ছুঁই ছুঁই।

সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় পানিবন্দি প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর, হাটবাজার—সবই পানির নিচে। কোথাও গলাপানি, কোথাও তারচেয়েও বেশি। নিরাপদ আশ্রয়, সুপেয় পানি ও খাদ্যসংকটে মানুষ দিশাহারা। নৌকাসংকটে উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ অন্ধকারে। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক থেকেও মানুষ বিচ্ছিন্ন। কেউ কারো সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছে না। পানিবন্দি অবস্থা থেকে বাঁচতে মানুষ আকুতি জানাচ্ছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে স্বজনরা দুশ্চিন্তায়। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা বিলম্বিত হওয়ার

আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল দুপুর থেকে উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমার পুরো ইউনিয়নে বুক সমান পানি। আমার বাড়ির সামনে দিয়ে অনবরত নৌকা যাচ্ছে, মানুষকে এনে রেখে আবার যাচ্ছে। নেটওয়ার্ক কম থাকায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় চার্জ দিতে না পারায় মানুষের মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ হয়ে আছে। কে কী অবস্থায় আছে বোঝা যাচ্ছে না। ’

বন্যা পরিস্থিতিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার ও তাদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘পুরো উপজেলায় পানি। আমরা এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের মতো মানুষকে উদ্ধার করেছি। উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি ত্রাণ তৎপরতাও চালাতে হচ্ছে।’

সিলেট সদরের ইউএনও নুসরাত আজমেরী হক বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা জালালাবাদ ও হাটখোলা ইউনিয়নের। আমরা ত্রাণ বিতরণসহ সার্বিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও উপজেলার সব কটি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে মানুষের জন্য। ’

একই পাড়ার সাজিদুর রহমান বলেন, ‘এমন বন্যায় সব ডুবে যাবে, চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় আমাদের অসহায় অবস্থা জানতে পারছে না দেশ-বিদেশের মানুষ। মানুষ এখন জীবন বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছে। বৃদ্ধ মা-বাবা ও সন্তান নিয়ে আমি চরম বিপদে।’

 

নতুনপাড়ার বাসিন্দা কল্যালব্রত আচার্য বলেন, ‘আমাদের বাসার নিচতলা ডুবে গেছে। আমরা ওপরতলায় ওঠার আগেই মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঘরে কোনো খাবার নেই। খাবার পানিও নেই। পাড়ার সব দোকান পানির নিচে। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠ