সিরাজগঞ্জে সাংসদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পুকুরপাড় এলাকার ৩৫ শতক জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষর জাল করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইবুনালে উপস্থাপন করায় সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের (শাহজাদপুর) বর্তমান সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালতের নির্দেশে সিরাজগঞ্জের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল আদালত-৩ এর বিচারক মো. তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে গত ২৫ জুলাই শাহজাদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চৌকি) আদালতে এ মামলা দায়ের করেছেন।

ইতোমধ্যেই অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হবার জন্য সমন জারি করেছে আদালত। মামলার অপর আসামি শাহজাদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আব্দুর রশিদ।

শাহজাদপুর আদালতের বেঞ্চ সহকারী শহিদুল ইসলাম সমনজারির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনের শাহজাদপুর পৌর শহরের দ্বারিয়াপুরের বাড়িতে হাজির হয়ে এ আদালতের প্রসেস সার্ভেয়ার আমিনুল ইসলাম এ সমনের কাগজ পৌঁছে দেন। এ সময় এমপি স্বপন ও তার পরিবারের কেউ বাসায় উপস্থিত না থাকায় সার্ভেয়ার আমিনুল ইসলাম এমপি স্বপনের বাসার ম্যানেজার আবদুল জলিলের কাছে সমন পৌঁছে দেন। ম্যানেজার জলিল এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনের পক্ষে স্বাক্ষর করে সমন জারির কাগজ বুঝে নেন।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, শ্রীমতি বাসন্তি রানী গং ২০১২ সালে সিরাজগঞ্জ অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইবুনাল আদালতে শাহজাদপুর পুকুরপাড়ের ৩৫ শতক জমি নিজেদের দাবী করে একটি মামলা দায়ের করে। যার নম্বর ২০০০/২০১২। পরবর্তিতে বিচারাধীন অবস্থায় মামলাটি সিরাজগঞ্জ কোর্ট থেকে শাহজাদপুর আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এ সময় এই মামলা পরিচালনার জন্য এ্যাডভকেট আব্দুস সাত্তার নিযুক্ত হন।

একই সময় এই মামলা চলাকালীন অবস্থায় শাহজাদপুর সাব রেজেস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. আব্দুর রশিদ ও স্থানীয় বর্তমান সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন মূল মামলা দাখিলকারীর স্বাক্ষর জাল করে প্রতারণার মাধ্যমে জাল আম-মোক্তারনাম তৈরী করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইবুনাল-৩ এ বিচারাধীন ২০০০/১২  মামলায় দাখিল করে।

মামলার মূল আবেদনকারী শ্রীমতি বাসন্তি রানি গংদের স্বাক্ষর ও আম-মোক্তারনামায় করা ৪জনের স্বাক্ষর নিয়ে আদালতের সন্দেহ হলে আদালত হাসিবুর রহমান স্বপনকে আদালতে স্বাক্ষী দিতে হাজির হবার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন নিজের ব্যাস্ততার অযুহাত দিয়ে কমিশনযোগ তার স্বাক্ষী নেবার জন্য ৭ নভেম্বর ২০১৭ সালে একটি আবেদন করে। আদালত সেটি অগ্রাহ্য করে তাকে স্বশরীরে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। পরবর্তিতে আম-মোক্তারনামায় করা স্বাক্ষরটি জাল বলে প্রতিয়মাণ হলে আদালত সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন ও দলিল লেখক আব্দুর রশিদকে অভিযুক্ত করে আদালতে ফৌজদারী মামলা করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করে।

আমমোক্তার নামায় সনাক্তকারী ও কমিশনযোগ স্বাক্ষ্য দেবার জন্য দরখাস্ত দাখিলকারী এ্যাডভকেট আব্দুস সাত্তারকে এ বিষয়ে নোটিশ প্রদান করে আদালত। আব্দুস সাত্তার লিখিতভাবে জানান, ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রশিদের মধ্যস্থতায় ওকালতনামা দিয়ে এই মামলার কাজ শুরু করেন তিনি। একই বছরের ৪মে আব্দুর রশিদ এই মামলার ৪জনের স্বাক্ষরসহ একটি আম-মোক্তারনামা তাহার নিকট আনিলে তিনি তাহা সরল বিশ্বাসে সনাক্ত করে আদালতে দাখিল করেন।

পরিবর্তিতে আদালত সংসদ সদস্যকে আদালতে স্বাক্ষী দেবার জন্য নির্দেশ দিলে সংসদ সদস্য নিজে তার সম্মুখে স্বাক্ষর করে কমিশনের মাধ্যমে স্বাক্ষ্য দেবার জন্য একটি দরখাস্ত দাখিল করেন। তবে পরবির্ততে তিনি মামলার অন্যান্য নথি দেখে বুঝতে পারেন যে আম-মোক্তারনামায় স্বাক্ষরগুলোর ক্ষেত্রে জাল জালিয়াতি করা হয়েছে। তিনি তার আবেদনে এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।  কালের কণ্ঠ