সিরাজগঞ্জে অপরিবর্তিত বন্যা পরিস্থিতি, ঈদের আনন্দ নেই কয়েখ লাখ মানুষের

রেদওয়ানুল হক বিজয়


সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যায় তলিয়ে গেছে আবাদি ফসলের জমাজমি। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন অনেকেই। পরিবার-পরিজনসহ গবাদি পশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে জেলার ৬টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুুষ। করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে নতুন করে বন্যা যুক্ত হওয়ায় ঈদের আনন্দ নেই এসব মানুষের।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে আজ মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সকাল ৬ টায় কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলায় এবার বন্যা কবলিত পাঁচটি উপজেলার ১৪ হাজার ১৭ হেক্টর জমির পাট, তিল ও আখ পানিতে ডুবে ক্ষতি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের এক লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে তিন লক্ষাধিক মানুষ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও থেকে বন্যার্তরা সহযোগিতা পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য।

এদিকে ঈদের আনন্দ নেই সিরাজগঞ্জের বন্যা কবলিত ৬টি উপজেলার বানভাসি সাড়ে তিন লাখ অসহায় মানুষদের মাঝে। গত তিনদিন ধরে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকলেও একটানা একমাসের অধিক সময় যাবৎ চলমান বন্যায় এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে জেলার ৬ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলের প্রায় আড়াই’শ গ্রামের ঘরবাড়ি বসতভিটা, জমিজমা।

সরেজমিনে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বানভাসি মানুষেরা শিশু, বৃদ্ধ, গবাদি পশু,হাস-মুরগী নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ ও উঁচু জায়গায়। অনেকেই রয়ে গেছে নিমজ্জিত বাড়ির ঘরের মধ্যেই চাঙ ও মাচাল করে। কেউ বা পরিবার নিয়ে নৌকাতেই ভাসছেন। জেলার পাঁচঠাকুরী ও শিমলাসহ বহু স্থানে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে জমিজমা ও ভিটেমাটি।

বন্যা কবলিত এসব মানুষের অনেকেই দিন পার করছেন অনাহারে অর্ধাহারে। ভিজিএফ, ভিজিডি ও বয়স্ক ভাতার অনুদানই এদের শেষ সম্বল। তা-ও আবার কখনো পাচ্ছেন, কখনো পাচ্ছেন না।

বন্যা কবলিতরা জানান, ঈদের আনন্দ করব কি দিয়ে। দু’বেলা দুমুঠো পেটের ভাতই জোগাড় করতে পারছি না। সেখানে ঈদের আনন্দ করার চিন্তা আনব কি করে। ঈদকে সামনে রেখে মানুষ যখন আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত তখন আমরা ঘরবাড়ি রক্ষা করা নিয়ে ব্যস্ত। সামনের দিনগুলা কীভাবে চলব সেই চিন্তায় রাতে ঘুমেই আসে না।

তারা আরো বলেন, কোরবানী দেওয়া তো দূরের কথা ঈদের দিন পরিবারকে একটু সেমাই খাওয়াতে পারব কিনা তাই তো জানি না।

শাহজাদপুরের কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, চরের অভাবী মানুষগুলোর কাছে ঈদ যেন শুধুই স্বপ্ন। কারণ সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি সহায়-সম্বল সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কৈজুরি ইউনিয়নে বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। এ বছর বন্যার পানি উঠায় মানুষের ঘরে রাখা ধান-চালও নষ্ট হয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুল হক জানান, সিরাজগঞ্জে চরবাসীর বসবাসকারী মানুষের একমাত্র সম্বল চাষাবাদ। বন্যার কারণে চরের অভাবী মানুষগুলোর চাষাবাদ করতে পারছে না। বন্যার কারণে এবার চরঞ্চলবাসীর মনে নেই ঈদের আনন্দ।

 

স/অ